বর্তমান স্থানে মাকামে ইবরাহীম স্থাপনে হযরত ওমর (রা.) এর ভূমিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৩:৫০,অপরাহ্ন ২৮ আগস্ট ২০২৩
উম্মে নহশল বন্যায় মাকামে ইবরাহীমকে ভাসিয়ে মক্কার নিম্নাঞ্চল (মেসফালার দিকে) নিয়ে যায়।
বর্তমান স্থানে মাকামে ইবরাহীম স্থাপনে হযরত ওমর (রা.) এর ভূমিকা।
মক্কা বিজয়ের দিন হযরত আব্দুল মুত্তালিব বিন আবু ওয়াদাআ (রা.) মুসলমান হয়েছেন। তিনি বর্ণনা করেন : হযরত ওমর (রা.) এর খেলাফতের সময় ১৭ হিজরিতে উম্মে নহশল বন্যা হয়। এই বন্যায় উম্মে নহশল এর মৃত্যু হয় এজন্য একে উম্মে নহশল বন্যা নামে নামকরণ করা হয়েছে।
বন্যার পানি মাসজিদুল হারামের বড় দরজা বাবে বনি-শায়বা দিয়ে প্রবেশ করে। বন্যার পানির গতি বেশী হওয়ায় মাকামে ইবরাহীম মক্কার নিম্নাঞ্চল (মেসফালার দিকে) ভেসে যায়।
বন্যার পানিতে মাকামে ইবরাহীমের নির্দিষ্ট চিহ্ন মুছে যায়।
বন্যা শেষে লোকেরা মাকামে ইবরাহীমকে কুড়িয়ে এনে কা’বা শরীফের দরজার সামনে গিলাফের সাথে বেধে রাখে।
এই ঘটনা হযরত ওমর (রা.) কে জানানোর পর হযরত ওমর (রা.) দ্রুত মদীনা থেকে ওমরাহ’র এহরাম পরে মক্কায় আসেন। মক্কার লোকদেরকে সমবেত করে জিজ্ঞেস করেন কে মাকামে ইবরাহীমে নির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে সঠিকভাবে জানো। তখন আব্দুল মুত্তালিব বিন আবু ওয়াদআ (রা.) বলেন হে আমীরুল মুমীনীন আমি জানি। আমার আশংকা ছিল মাকামে ইবরাহীম ভেসে যাবার। তাই আমি হাজারে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহীম, বাবে কা’বা থেকে মাকামে ইবরাহীম ও যমযম থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব রশি দিয়ে মেপে রেখেছি এবং রশিটি আমার ঘরে যত্ন করে রেখেছি।
হযরত ওমর (রা.) বলেন আপনি আমার পাশে বসুন এবং রশিটি আনার জন্য একজন লোককে পাঠান। রশি দিয়ে মেপে দেখা হলো মাকামে ইবরাহীম যে স্থানে অনুমান করা হয়েছিল সেই স্থানই। তিনি অন্যান্ন লোকদের জিজ্ঞেস করেন এবং পরামর্শ করেন। তখন বড় বড় সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন, সবাই এই জায়গার ব্যাপারে রায় দেন।
হযরত ওমর (রা.) এর কাছে জায়গাটি সুস্পষ্ট হওয়ার পর তিনি মাকামে ইবরাহীমে নীচে ও চতুর্পাশের মজবুত করে ভিত্তি করেন এবং একটি বাধ নির্মাণ করেন । তখন থেকে আজ পর্যন্ত মাকামে ইবরাহীম এই জায়গায়ই আছে।
কিয়ামত পর্যন্ত মাকামে ইবরাহীম যথাস্থানেই থাকবে কেননা আল্লাহ তাআ’লা এটাকে স্থায়ী নিদর্শন বলে পবিত্র কোরআনে বলেছেন
فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ
বর্তমানে – হাজারে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব ২৯ হাত ৯ আঙ্গুল। রুকনে ইরাকী থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব ২৮ হাত ১৭ আঙুল। যমযম থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব ২৪ হাত ২০ আঙুল।
হযরত ওমর রা. এর ইচ্ছে অনুযায়ী আল্লাহ তাআ’লা واتَّخِذُوا مِن مَقامِ إبْراهِيمَ مُصَلًّى আয়াত নাযিল করেন। এই আয়াত নাযিলের পর রাসূলে (স.) এখানে নামাজ পড়েছেন।
একবার নবীজি (স.) তাওয়াফ করলেন হযরত ওমর (রা.) প্রশ্ন করলেন এটা আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর পাথর? নবীজি (স.)বললেন- হ্যা। হযরত ওমর (রা.)আবার প্রশ্ন করলেন আমরা কী এখানে নামাজ পড়ব না? নবীজি (স.) বললেন এ ব্যাপারে আমাকে আল্লাহর পক্ষথেকে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি ,এরপর এ আয়াত নাযিল হলো।
واتَّخِذُوا مِن مَقامِ إبْراهِيمَ مُصَلًّى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমের কাছে নামাজ পড়ো।
হযরত ওমর (রা.) বলেন : আল্লাহ তাআ’লার সাথে ৩ টি
বিষয়ে বা আল্লাহ তাআ’লা আমার সাথে ৩ টি বিষয়ে একমত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ টি হচ্ছে আমি নবীজী (স.)কে বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (স.) আপনি যদি মাকামে ইবরাহীমে নামাজ পড়তেন! এরপর আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন – واتَّخِذُوا مِن مَقامِ إبْراهِيمَ مُصَلًّى
মাকামে ইবরাহীম পাথরের উপর দাড়িয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) কা’বা শরিফ পুননির্মাণ করেন। পাথরটি লিফটের কাজ করত! প্রয়োজনে উনাকে নিয়ে উপরে উঠত- সুবহানাল্লাহ।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালামা (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআ’লা যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে বললেন আপনি লোকদের হজ্জের জন্য আহ্বান করুন তখন ইব্রাহিম (আ.) এই পাথরে উঠেন পথর উনাকে নিয়ে জাবালে আবু কুবায়েসের উপরে উঠে! পাথরের উপর তার পায়ের দাগ পরে যায়। তিনি সবাইকে হজ্জের আহ্বান করেন।
নবীজি বলেন লোকেরা তার পিতার পৃষ্ঠদেশ ও মায়ের পেট থেকে সাড়া দিয়ে বলেছিল.. লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক। আজও যারা হজ্জ পালনে আসেন তারা ঐ আহ্বানে কমবেশী সাড়া প্রদানকারী।
এরপর আল্লাহ তাআ’লা পাথরটিকে তার সামনে রাখার নির্দেশ দেন। ইব্রাহিম (আ.) পথরকে সামনে রেখে বাবুল কা’বার দিকে মুখ করে নামাজ পড়েন।
হযরত আমর বিন আস (রা.) বলেন, আমি রাসূল (স.)কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম বেহেশতের দুটি ইকুত পাথর, আল্লাহ এগুলোর আলো মিটিয়ে দিয়েছেন আর নাহয় এগুলোর আলোতে দুনিয়ার পুর্ব থেকে পশ্চিম ভূখন্ড আলোকোজ্জ্বল হয়ে যেত।
মাকামে ইবরাহীমে নামাজ পড়ার নিদর্শন বাস্তবায়নের জন্য তাওয়াফ শেষে ২ রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। আর কা’বা শরিফ ও মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে নবীজি নামাজ পড়েছেন এজন এই দু রাকাত নামাজ কা’বা শরিফ ও মাকামে ইবরাহীমকে সমনে রেখে পড়া সুন্নত।
হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর মোজেজার কারণে তার পায়ের নিচের পাথরটি ভিজে পাথরে পায়ের দাগ বসে যায়। কা’বা শরিফ পুননির্মাণের পর থেকে (৪ হাজার বছর) পরেও তাঁর পায়ের দাগ আজও বিদ্যামান আছে। সুবহানাল্লাহ।
রেজওয়ান আহমদ
মুয়াল্লিম: লতিফ ট্রাভেলস – মক্কা মুকাররমাহ সৌদি আরব।