সমুদ্র কতটা গভীর
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৫:২৩,অপরাহ্ন ২০ এপ্রিল ২০২৪
সমুদ্রের গভীরতা জানতে হলে কিছু বিস্ময়কর সংখ্যা জানা দরকার।
পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশই পানি দিয়ে ঢাকা। এই সব পানি মিলে পৃথিবীর মোট ৩৩২,৫১৯,০০০ ঘন মাইল অথবা মোট ১,৩৮৬,০০০,০০০ ঘন কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা দখল করে আছে।
এমনকি সমুদ্রে যে পরিমাণ পানি আছে তা যদি এক গ্যালন ওজনের একেকটি দুধের কন্টেইনারে রাখা হয়, তাহলে মোট ৩৫২,৬৭০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০টি কন্টেইনার লাগবে।
যেহেতু আমাদের কাছে এতগুলি দুধের কন্টেইনার থাকা সম্ভব না, তাই চলুন ভিন্ন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাক। তাত্ত্বিকভাবে আপনি সমুদ্রের পানি দিয়ে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (আলাস্কা ও হাওয়াইসহ) ৮২ মাইল (অর্থাৎ ১৩২ কিলোমিটার) উচ্চতা পর্যন্ত ঢেকে দিতে পারবেন।
সমুদ্র সম্পর্কে মানুষের যেসব সাধারণ জিজ্ঞাসা রয়েছে তার বেশিরভাগই সমুদ্রের গভীরতা সমন্ধে। সমুদ্র কতটা গভীর? এর সবচেয়ে গভীর অংশ কোথায়? এবং সমুদ্রের গড় গভীরতা কত?
এই লেখাতে সমুদ্রের গভীরতা সম্পর্কিত এই প্রশ্নগুলির উত্তর থাকছে।
সমুদ্রের গড় গভীরতা
সঠিকভাবে বললে, পৃথিবীতে মাত্র একটিই মহাসাগর আছে। তাই একটু বিভ্রান্তিকর লাগে যখন এই বিশাল জলরাশির ৫টি প্রধান অঞ্চলকেই আলাদাভাবে “মহাসাগর” বলা হয়: যেমন, প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর।
এগুলি একত্রে “বিশ্ব মহাসাগর” নামে পরিচিত। সাধারণত মানুষ যখন “সাগর” বিষয়ে কথা বলে তখন আসলে বিশ্ব মহাসাগরকেই বোঝায়। এর আগে সমুদ্রের পানির পরিমাণ প্রসঙ্গে যে উদাহরণ দেয়া হয়েছে, সেখানেও মহাসাগর বলতে বিশ্ব মহাসাগরকেই বোঝানো হয়েছে।
অবশ্যই, সব জায়গায় সমুদ্রের গভীরতা সমান নয়। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী সমুদ্রের গভীরতার পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। মানচিত্রের যেকোনো স্থানের সমুদ্রের তলদেশে ও ওপরে জলের পৃষ্ঠের মধ্যকার দূরত্ব বিভিন্ন গিড়িখাদ (ক্যানিয়ন), পানির তলার পর্বতমালা বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে।
সোনার, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব মহাসাগরের গড় গভীরতা বের করেছেন। প্রায় ১২,৭৮৫ ফুট (৩,৮৯৭ মিটার)। প্রায় ২.৪ মাইল বা ৩.৮ কিলোমিটারের সমান।
সমুদ্রের গভীরতম স্থান
বিশ্ব মহাসাগরকে যে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেই ৫টি মহাসাগরের সবথেকে গভীরতম স্থান:
আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগরের গভীরতম স্থান হল মোলোয় হোল (Molloy Hole)। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮,৫৯৯ ফুট (৫,৬৬৯ মিটার) গভীরে অবস্থিত।
ভারত মহাসাগরের গভীরতম স্থান কোনটি? সম্ভবত জাভা ট্রেঞ্চের একটি নামহীন অঞ্চল, যেটি সমুদ্রের ২৩,৯১৭ ফুট (৭,২৯০ মিটার) নিচে অবস্থিত।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে চারিদিক থেকে ঘিরে থাকা দক্ষিণ মহাসাগরের গভীরতম স্থানটি রয়েছে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ ট্রেঞ্চের মধ্যে। এর গভীরতা ২৪,২২৯ ফুট (৭,৩৮৫ মিটার)।
আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম স্থান হল পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চের মিলওয়াকি ডিপ নামক স্থানটি। যা ২৭,৫৮৫ ফুট (৮,৪০৮ মিটার) গভীর।
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে বিস্তৃত জলরাশির নিচে একটা গভীর খাদ রয়েছে। রোমাঞ্চসন্ধানী অভিযাত্রিক এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখকদের এই জায়গার ওপরে আগ্রহ কখনও কমে না।
এর নাম হল মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। এবং এটি শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরেরই নয়, বরং পুরো বিশ্ব মহাসাগরের সবথেকে গভীরতম স্থান। এই স্থানটিকে আমাদের মানচিত্রে “চ্যালেঞ্জার ডিপ” নামে চিহ্নিত করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে এর অবস্থান।
চ্যালেঞ্জার ডিপের সঠিক গভীরতা পরিমাপ করা বেশ কঠিন। তবে ২০১৯ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে প্রায় ৩৫,৮৪৩ ফুট (১০,৯২৫ মিটার) গভীরে অবস্থিত।
এই গভীরতা আসলে কতটা গভীর? অনেক অনেক গভীর। আসলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই পয়েন্টটির গভীরতা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার থেকেও বেশি। হিমালয় পর্বতমালার শীর্ষবিন্দুটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২৯,০২৫ ফুট (৮,৮৪৮ মিটার) উঁচু। পৃথিবীর টেকটনিক প্লেটের গতিবিধি ও মিথস্ক্রিয়ার ফলে এই গভীরতম খাদ যেমন তৈরি হয়েছে, একই কারণে পৃথিবীর সর্ব উচ্চ পর্বতমালাগুলিও গঠিত হয়েছে।
আমরা কীভাবে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করি?
আপনি যদি জ’স, দ্য মেগ বা এই জাতীয় অন্য কোন গভীর-সমুদ্রভিত্তিক থ্রিলার মুভি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি মানুষের কল্পনা করা কিছু ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণীর দেখা পেয়েছেন।
এইসব প্রাণীর সবগুলিই কাল্পনিক নয়, এর কয়েকটি আসলেই বাস্তবে ছিল। যেমন মেগালোডন—এটি একটি স্কুল বাস আকারের শার্ক! তারা সমুদ্রের কতটা গভীরে বাস করত তা আমরা জানি না। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা বলতে পারি বর্তমান সময়ের শার্কগুলোর দেখা সাধারণত প্রায় ২,০০০ মিটার (৬,৫০০ ফুট) গভীর সমুদ্র পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এই তথ্য কীভাবে জানলাম?
বিজ্ঞানী ও গবেষকরা যে পদ্ধতিতে সমুদ্রের গভীরতা সঠিকভাবে পরিমাপ করেন এখন আমরা সেগুলি দেখব।
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে যেমন পাহাড় ও টিলা থাকে, সেরকম সমুদ্রের তলদেশ বা সমুদ্রপৃষ্ঠও সম্পূর্ণভাবে সমতল নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠে যেমন সমতলও রয়েছে, তেমন খাদ বা ক্যানিয়ন, খাত বা ট্রেঞ্চ এবং পানিতে ডুবো আগ্নেয়গিরিসহ সব ধরনের ভূমিরূপও রয়েছে।
পৃথিবীর মহাসাগর, হ্রদ ও নদীগুলির গভীরতা পরিমাপ করার বিজ্ঞানকে বলা হয় বেথিমেট্রি বা গভীরতামিতি। বেথিমেট্রিক মানচিত্র আর সাধারণ স্থল মানচিত্র প্রায় একই রকমের। উভয়ই একটি নির্দিষ্ট এলাকার ভূমিরূপ তুলে ধরে। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে মহাসাগরের গভীরতা পরিমাপ করতে পারেন।
আসুন, এই পদ্ধতিগুলোর দিকে এখন নজর দেওয়া যাক:
১. সোনার
সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত ও দ্রুততম পদ্ধতি হল শব্দ ব্যবহার। সোনার নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাহাজগুলি সমুদ্রের তলদেশের আকার, বৈশিষ্ট্য ও বিবরণ (topography) জানতে পারে। এবং এর ভিত্তিতে সমুদ্রের মানচিত্র তৈরি করে। ইংরেজি Sonar শব্দটি ‘sound navigation and ranging’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই যন্ত্রটি সমুদ্রের তলদেশে শব্দতরঙ্গ পাঠায় এবং প্রতিধ্বনি ফিরে আসতে কতক্ষণ সময় লাগে তা পরিমাপ করে। এখানে “প্রতিধ্বনি” বলতে সমুদ্রের তলদেশ থেকে প্রতিফলিত হয়ে সোনার ডিভাইসে ফেরত আসা শব্দতরঙ্গকে বোঝানো হচ্ছে।
মাল্টিবিম ইকোসাউন্ডার বা Multibeam echosounders (MBEs) হল এক ধরনের সোনার ডিজাইস। এটি সমুদ্রের তলদেশ স্ক্যান করার জন্য পাখার মত গঠনে দ্রুত শব্দ তরঙ্গ পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সমুদ্র ও আবহাওয়া সংস্থা (NOAA) সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করতে এই এমবিই ডিভাইস ব্যবহার করে। কিছু জাহাজ সমুদ্রের তলদেশের নির্দিষ্ট এলাকাগুলির মানচিত্র আঁকার জন্য সোনার ডিভাইসটি এগিয়ে-পিছিয়ে শব্দতরঙ্গ পাঠায়।
২. রাডার এবং স্যাটেলাইট
রাডারের মাধ্যমেও সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা যায়। যদিও এটি সোনারের মত দ্রুত না। সোনারের মত রাডারকেও এক ধরনের তরঙ্গ পাঠাতে হয়। পার্থক্য হল রাডার থেকে প্রেরিত তরঙ্গ মূলত রেডিওতরঙ্গ। এটি এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ। কিন্তু তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ বাতাসের থেকে পানির তলে ধীর গতিতে চলাচল করে এবং পানির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এর শক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। রাডার প্রধানত বায়ুমণ্ডলীয় পরিমাপের জন্য বেশি ভাল।
তবে রাডার আর স্যাটেলাইট যুক্ত করে আরেকটি পদ্ধতিতে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হয়। রাডার আল্টিমিটার হল এমন একটি যন্ত্র যা রেডিও তরঙ্গগুলি পৃষ্ঠ থেকে স্যাটেলাইটে ফিরে আসতে কতক্ষণ সময় লাগে তার ওপর নির্ভর করে ভূমি থেকে বাতাসের দূরত্ব পরিমাপ করতে পারে। সমুদ্রের পৃষ্ঠতল আমাদের চোখে ধরা পড়ে না, রাডার আল্টিমিটার সেখানে রেডিওতরঙ্গ পাঠায়, এই তরঙ্গ সমুদ্রপৃষ্ঠে ধাক্কা খেয়ে আবার স্যাটেলাইটে ফিরে আসে। এতে যতটুকু সময় লাগে তার ওপর নির্ভর করে সমুদ্রের গভীরতা বের করা যায়।
এছাড়াও গবেষকরা রাডার আল্টিমিটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করতে পারেন। এমনকি শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠতল অধ্যয়নরত মহাকাশযানগুলিতেও এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপের জন্য সোনারের মত প্রযুক্তি আমাদের রয়েছে। তারপরেও সমুদ্রের তলদেশের একটি অংশের মানচিত্র তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। পুরো সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্র তৈরি করতে প্রায় ১২৫ বছর লেগে যাবে, সেই কারণেই পৃথিবীর সমুদ্রের মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশেরই মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সমুদ্রের পৃষ্ঠতল সমুদ্রের তলদেশের ভূমিরূপেরই অনুকরণ, তাই সমুদ্রের তলদেশ কেমন সেটা আমাদের ইতিমধ্যেই জানা।
কিন্তু একারণে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপের গুরুত্ব একটুও কমে না। এবং এসব তথ্যের আবেদনও কোনো অংশে কমে না। এসব প্রযুক্তির জন্যই বিজ্ঞানীরা নিনজা লানর্টানশার্কের মত গভীর সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণ আবিষ্কার করতে পেরেছেন।
এছাড়াও সমুদ্রে দিকনির্দেশনা, নৌচালনার জন্য মানচিত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ গবেষণায় আরও অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞানীরা এসব ডেটা থেকে বেশ উপকৃত হয়েছেন।
প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণেই এখন আমাদের কাছে সমুদ্রের গভীরতা মাপার আধুনিক সব পদ্ধতি রয়েছে। ফলে আমরা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পারছি। সমুদ্র ও তার ওপর আমাদের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও বিস্তৃত করতে পারছি।
আগের দিনে যেভাবে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হতোসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপের জন্য শব্দ ও রাডার ব্যবহার শুরুর আগে, জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং তার দলের লোকেরা সমুদ্রের গভীরতা মাপার জন্য ভিন্ন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করত। আগে নাবিকরা লিড লাইন নামক একধরনের যন্ত্র ব্যবহার করত। এ পদ্ধতিতে একটি দড়িতে সীসা ঝুলানো হত, দড়িটি প্রতি ৬ ফুট পরপর চিহ্নিত করা থাকত, এই দৈর্ঘ্যকে ফ্যাদম (fathom) বলা হয়। কখনও কখনও দড়িতে কাপড় বা চামড়ার টুকরাও বাঁধা থাকত। এরপরে একজন দড়িটিকে পানিতে ফেলে দিতেন, এবং সীসার মালাটি পানির তলে পৌঁছালে, নাবিকরা দড়ির চিহ্নগুলি ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশের দূরত্ব পরিমাপ করতেন এবং লিখে রাখতেন।
এই লিড লাইন জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে গভীরতা পরিমাপের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান পদ্ধতি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে নাবিকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের পানি কতটা গভীর এবং এই পানিতে তাদের জাহাজ আটকে যাবে কিনা তা বুঝতে পারত।
লিড লাইনের নিচের অংশের ভেতরের দিকটা খোলা থাকত এবং গ্রিজ দিয়ে ভরা থাকত। ফলে এটি সমুদ্রের তলদেশ থেকে নমুনা তুলে আনত। সমুদ্রের তলে বালি, পাথর, না কাদা রয়েছে তা নির্ধারণ করতে ক্যাপ্টেনকে সাহায্য করত লিড লাইন।
সংগৃহিত