পূরোদমে সচল হলো মৌলভীবাজারের ৯২টি সহ দেশের ১৬৭টি বাগান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২২:৪৬,অপরাহ্ন ২৯ আগস্ট ২০২২
জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :: মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলন শেষে দীর্ঘ ২০দিন পর পূরোদমে সচল হলো চা শিল্পের সার্বিক কার্যক্রম। আজ সোমবার থেকে ঘুরছে চা ফ্যাক্টরীর চাকা। একযোগে নেমেছেন জেলার ৯২টি বাগান সহ দেশের ১৬৭টি বাগানের শ্রমিকরা পাতা উত্তোলনে। ২৯ আগষ্ট সোমবার বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা জানান, চায়ের ভরা মৌসুসে দেশের ১৬৭টি চা বাগান নিয়ে গঠিত ৭টি ভ্যালীর চা শ্রমিকদের নতুন মজুরী ১৭০ টাকা ঘোষনা আসার পর সকাল থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে চা বাগান মালিকদের সাথে গণভবনে প্রধান মন্ত্রীর বৈঠক শেষে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ১৭০ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বর্ধিত করাসহ প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন। এমন ঘোষণা পেয়ে খুশী হয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আজ সকাল থেকে উৎফুল হয়ে প্রতিটি বাগানের শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলন ও ফ্যাক্টরি কাজসহ অন্যান্য কাজে যোগদেন।
গতকাল রোববার চা বাগান শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বেশ কিছু বাগানে নগদ হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। এদিকে চা শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে রোববার বিকেলে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা আনন্দ মিছিল বের করে।
৩০০ টাকা মজুরীর দাবীতে গত ৯ আগষ্ট থেকে ২ ঘন্টা করে কর্ম বিরতি এবং ১৩ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে নামেন চা শ্রমিকরা। দাবী না মানায় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগান সহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা টানা ১৯দিন ধর্মঘট পালন করেন ।
এদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে প্রধানমস্ত্রীর কর্তৃক ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে আনন্দ মিছিল করেছে। আনন্দ মিছিলে শত শত চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করে।
আনন্দ মিছিলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি বিজয় হাজরা, ভাড়াউড়া পঞ্চায়াত সভাপতি নূর মোহাম্মদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়া, খাইছড়া চা বাগান ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকেরা উচ্ছসিত হয়ে কাজ করছেন।চা শ্রমিকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন, আমরা খুশি হয়ে কাজে যোগ দিয়েছি। তিনি ১৭০ টাকা মজুরি নিধারণ করায় মনোযোগ দিয়ে পাতি তুলছি।
ভাড়াউড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মজুরি নিধারণ করায় চা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাগানে পাঠিয়েছি। তাঁরা বাগানে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক বাঁচাও, মালিক বাঁচাও এবং বাগান বাঁচাও সর্বদিক বিচার বিশ্লেষণ করে যে মজুরি ১৭০ টাকা নিধারণ করেছেন সেটাতে আমরা খুশি। আমরা ফিনলে বাগানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
চা বাগানে শ্রমিক ময়না হাজরা বলেন, অনেক আনন্দ আজকে লাগছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাজিরা ১৭০টাকা করেছে। এতদিন ঘরে বসে ছিলাম। এক বেলা খাইছি,আরেক বেলা খাইতে পারছি না। এখন তিন বেলা খাইতে পারব। একই কথা জানালেন, মঞ্জু হাজরা, বিদ্যাবতী হাজরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘মালিকপক্ষের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আড়াই থেকে তিনঘন্টা আলোচনা করেছেন। তিনি চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নিধারণ করেছেন। এতে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং বলেন প্রধানমন্ত্রীই তাদের শেষ ভরসা। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তারা সব সময় মেনেছেন এবং ভবিষৎতের মানবেন।
আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ১৭০ টাকা মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যেক বাগানের স¦স্ব শ্রমিকেরা কাজে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সবাই কাজে যাচ্ছেন। রোববার বাগানগুলো সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নগদা হাজিরায় (নগদ পেমেন্ট) শ্রমিকরা কাজ করে। এক্ষেত্রেও তেমনই হবে।