জুড়ীতে কমলার বাম্পার ফলন: চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৩:৪৮,অপরাহ্ন ৩০ নভেম্বর ২০১৯
আব্দুর রব, বড়লেখা:
জুড়ী উপজেলার কমলা বাগানগুলোতে গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু কমলা। এবারের বাম্পার ফলন আর বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় পাহাড়ি জনপদের কমলা চাষিদের মুখে বইছে আনন্দের হাসি। গত ১৯ নভেম্বর জুড়ীর বিভিন্ন কমলা বাগান পরিদর্শন করেন লেবু ফসল সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ফারুক আহমদ, কৃষি বাতায়নের কৃষকের তথ্য সন্নিবেশ কর্মসূচির পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজম উদ্দিন, বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবল সরকার ও ডিএই কর্মকর্তাগণ।
জুড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯২ হেক্টর টিলা ভুমিতে ৮৫ টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। মোট কৃষকের সংখ্যা ৮১২ জন। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নেই ৮০ ভাগ কমলা বাগানের অবস্থান। এ বাগানগুলোতে ২ জাতের কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। এক জাতের নাম ‘খাসি’ ও অপর জাতের নাম ‘নাগপুরি’। অত্রাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় ‘খাসি’ জাতের কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। এ বাগানগুলো থেকে চলতি মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টন কমলা লেবু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কমলা চাষ বদলে দিয়েছে অত্রাঞ্চলের চাষিদের জীবন। কমলা পাকতে শুরু করায় ইতোমধ্যে বেচা-কেনাও শুরু হয়ে গেছে। এবার কমলার ভাল ফলনের পাশাপাশি বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় চাষিরাও বেশ আনন্দে গাছ থেকে কমলা সংগ্রহ ও বাজারজাত করণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে পাকা, আধা পাকা কমলা সংগ্রহ ও খাঁচাবন্দি করে পাইকারদের হাতে তুলে দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে মূখে প্রশান্তির হাসি নিয়ে ঘরে ফিরছেন চাষিরা। এ অঞ্চল থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার বেশী কমলা বিক্রি হবে হলে আশা করছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় দ্বিগুন বেশী কমলার ফলন ও বিক্রি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষি ও সংশ্লিষ্টরা। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ক্রেতা ও চাষিরা পাকা ও আধাপাকা কমলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ভৈরব ও সিলেটে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকযোগে পাঠাচ্ছেন। উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া, পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া ও টালিয়াউরা এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলা বাড়িগুলোতে কমলার পাশাপাশি বাতাবি লেবু, আদা লেবু, শাসনি ও জাড়া লেবুর বাগান রয়েছে। আর এ বাগানগুলোর পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বছরে এক একটি বাগান থেকে ২/৩ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমনই শ্রমও বেশি দিতে হয়না এমনটাই জানিয়েছেন অত্র বাগানগুলোর কৃষকরা। ফলে, কমলা চাষে অত্রাঞ্চলের কৃষকরা আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।
সরেজমিনে গেলে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া গ্রামের কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া (৪৯) জানান, কমলা এক বছর বেশি হলে অন্য বছর কম হয়। প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী এবারের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, এবারে কমলার বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি। কমলা আকারেও বড়। তিনি ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। আরো ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি শামীম আহমদ (৩০), হায়াছড়া গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৪), কচুরগুল গ্রামের হাজী নজির আহমদ (৬০) ও শুকনাছড়া গ্রামের ইব্রাহিম আলী (৫৫) সহ অনেকে জানান, প্রতি বছর ভারতীয় কমলা বাংলাদেশে আসায় আমাদের কমলা বিক্রি করতে সমস্যা হয়। জুড়ীর কমলা বিক্রি কমলা বাজারজাত করতে তেমন একটা সময় লাগে না। সর্বোচ্চ দেড় মাসের মধ্যেই সব বাগানের কমলা পেকে যায়। এখানকার কমলা চাষীদের স্বার্থে এ দেড় মাস সময় এ অঞ্চলে ভারতীয় কমলা আমদানী বন্ধ রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জসিম উদ্দিন জানান, অত্রাঞ্চলের কমলা চাষিরা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন। পোকা মাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করায় এবং কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করায় এ বছর জুড়ীতে কমলার ভাল ফলন হয়েছে। ভারতীয় কমলা যাতে আমাদের বাজারে আসতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।