কুলাউড়াকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি ব্যবসায়ী নেতার
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০০:৫৬,অপরাহ্ন ০৫ জুলাই ২০২৪
কুলাউড়া প্রতিনিধি :: কুলাউড়ায় চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বেগম রোকিয়া কল্যাণ ট্রাস্টের প্রধান পরিচালক এম আতিকুর রহমান আখই। ৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরস্থ এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপস্থিতিতে কুলাউড়াকে ‘বন্যাদুর্গত’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও দ্রুত ত্রাণ সরবরাহের দাবি জানিয়ে বন্যার্তদের পুনর্বাসনে ৭ দফার সুপারিশ করা হয়।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৭ জুন থেকে কুলাউড়ার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ওইসকল এলাকায় হাকালুকি হাওর এবং পাশ^বর্তী জুড়ী নদীর পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হয়। ফলে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে এখানকার লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার শুরু থেকেই আমি ব্যক্তিগত ও বেগম রোকিয়া কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কুলাউড়ার মানুষের বিভিন্ন সংশয়, সংকট ও দুর্যোগ-দুর্ভোগে সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি কোনো জনপ্রতিনিধি বা নেতা না হয়েও প্রতিদিনই অসহায়-হতদরিদ্র পানিবন্দি মানুষের সাহায্যার্থে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র সহ বন্যাকবলিত এলাকায় ছুটছি।
তিনি বলেন, কুলাউড়ার প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ আজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পানিবন্দি। নিজেদের ভিটামাটি ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিজেদের বাড়িতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের ভেতর পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানিবন্দি এ সমস্ত মানুষের মধ্যে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘ ২০ দিন থেকে মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত যে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সরকারি হিসাব মতে, এ পর্যন্ত ১৬ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও ১১ শতাধিক পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাত্র ১০ কেজি চাল দিয়ে কী ৫ থেকে ৭ জনের একটা পরিবার ১৫ থেকে ২০ দিন চলতে পারে?
অতীতেও অনেক বৃষ্টি হয়েছে, পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে, ভারতের পানি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, মনু নদীর ভেঙে পানি এসেছে, কিন্তু এভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়নি উল্লেখ করে আতিকুর রহমান আখই আরও বলেন, ২০২২ সাল থেকে সামান্য বৃষ্টি হলে বা পাহাড়ি ঢল নামলেই কুলাউড়াসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। তার কারণ হিসাবে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাওরের নির্মিত রাস্তা ও ফেঞ্চুগঞ্জের বুঁড়িকিয়ারি বাঁধকে দায়ী করা হয়। আবার কেউ কেউ সুরমা, কুশিয়ারা নদীকে খনন না করাকেও দায়ী করেন। কারণ যাই হোক আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই, “ মানুষ ত্রাণ নয় পরিত্রান চায়, এ থেকে মুক্তি চায়”।
তিনি বলেন, যেকোন দুর্যোগ দুর্ভোগে আমাদের কুলাউড়ার বীর সেনানিরা এগিয়ে আসেন। সকল সংকটে প্রবাসে অবস্থানরত সকল কুলাউড়াবাসী সাহায্যের হাত প্রসারিত করেন। দেশ ও প্রবাসে অবস্থানরত কুলাউড়াবাসীর সহযোগিতা নিয়ে আমাদের কুলাউড়ার অনেক মানবিক, সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। এবারের বন্যা পরিস্থিতিতে থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠন তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা নিয়ে ছুঁট যাচ্ছেন বন্যার্তদের কাছে। কিন্তু, আমাদের পরস্পরের সাথে সমন্বয় না থাকার কারণে একাধিক সংগঠন একি জায়গায় উপহার সামগ্রী বিতরণ করছি। এতে করে অনেকেই একাধিকবার উপকৃত হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। তাই আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন।
কুলাউড়ার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের ঘর-বাড়ি, খেত-খামার, পুকুরের মাছ, গৃহপালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সহ অনেক খামারির শেড পানির কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। পচা দুর্গন্ধ পানির কারনে শত শত মানুষ অসুস্থতায় ভুগছেন। মানুষের দুর্ভোগ লাগবে প্রয়োজন জরুরি সরকারি মোটা অংকের সাহায্য। একটা এলাকা কে বন্যা কবলিত ঘোষণা করতে উল্লেখিত কারনগুলোই কি যথেষ্ট নয়?
সভায় আতিকুর রহমান আখই সরকারের কাছে ৭টি দাবি ও প্রস্তাবনা পেশ করেন। এগুলো হলো-অবিলম্বে কুলাউড়া উপজেলাকে “বন্যাদুর্গত” এলাকা ঘোষণা করে সরকারি ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেক পরিবারকে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, যে সমস্ত ব্যবসায়ী বা খামারি যাদের গরু ছাগল, হাঁস মুরগি ও মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে বিনা শর্তে ও বিনা সুদে কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা করে ঋণ প্রদান, জরুরি ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি সরকারি টিম গঠন করে ২০২২ সাল থেকে কেন কুলাউড়াসহ বৃহত্তর সিলেটে বন্যার সৃষ্টি হয় তার কারণ উদঘাটন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে যে সমস্ত সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কাজ করছেন তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় সৃষ্টির প্রস্তাব, পানি নামার সাথে সাথেই কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালের রাস্তা ও উপজেলা পরিষদের রাস্তা উঁচু করাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা, বন্যার্তদের জন্য নির্ধারিত প্রায় সকল আশ্রয় কেন্দ্রই পানিবন্দি, তাই আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ পরিবর্তন করে উঁচু ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা, দীর্ঘমেয়াদি এই বন্যায় পানিবন্দি মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করার লক্ষ্যে এবং সংকট মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে কুলাউড়ার সকল জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবিসহ সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।