সালিশে উপস্থিত না হওয়াতে বড়লেখায় দুই ভাইয়ের পরিবার সমাজচ্যুত
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৭:৫৬,অপরাহ্ন ২২ জুন ২০১৯
একঘরে (সমাজচ্যুত) হওয়া বিকুল চন্দ্র দাস জানান, ‘গত প্রায় দু’মাস আগে পাশের বাড়ির একজনের সাথে আমার স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজির ঝগড়া হয়। এর জের ধরে তারা লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজিকে মারধর ও বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করে। এতে আমাদের বাড়ির তিনজন রক্তাক্ত জখম হয়। তারা বড়লেখা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে মেম্বার ও গ্রামের মুরব্বিরা বাঁধা দিয়ে বিচার করে দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নেন। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের উপর দোষ চাপানোর প্রস্তুতি নেন। দু’মাস অতিবাহিত হলেও তারা বিচার না করায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি। তারা সময় নিয়েছেন। অসহায়ের মত ঘুরেছি। বিচার করে দেবেন বলে মেম্বার লোকজন নিয়ে আমার সাথে পুতুল খেলা খেলেন। আমানতও ফেরত দেননি। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৩ জুন বড়লেখা বিচারিক আদালতে মামলা করেছি। এ খবর পেয়ে শুক্রবার (১৪ জুন) তারা তড়িঘড়ি করে বিচার ডাকেন। কিন্তু আমাকে কেউ কিচ্ছু বলেনি। হঠাৎ মেম্বার এসে আমাকে বলেন আজ তোমার বিচার। তখন আমি মেম্বারকে বলি আপনারা বিচার বসাবেন আমাকে আগে জানাননি কেন। আমারও মুরব্বিদের তো বলার দরকার ছিল। এভাবে আমি বিচারে বসব না। আমি তাদের বলেছি যে, আমি অনেক দিন অপেক্ষা করে বিচার পাইনি। বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়েছি। এখন মামলায় যা হয় হবে। তারা একদিন সময় দেন। আমি পরদিনও তাদের একই কথা জানিয়ে দেই। এদিন রাতে গ্রামের দিগেন্দ্র দাসের বাড়িতে সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বিকাশ মেম্বার, পঞ্চায়েতের মুরব্বি বিজয় ভূষণ দাস, নিরঞ্জন দাস, সুবুধ দাস, অবুধ দাস ও জগদীশ দাস গ্রামের অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে তারা আমাদের দুইভাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করেন। এরপরের দিন গ্রামের এক বাড়ির পূজায় সবাই নিমন্ত্রণ পায় কিন্তু আমরা পাইনি। সামাজিক বৈঠকেও আমাদের ডাকা হচ্ছে না। এছাড়া তারা আমাদের খারাপ আখ্যায়িত করে আমরা মেম্মার, চেয়ারম্যান, সমাজ মানি না এসব লিখা কাগজে গ্রামের মানুষের দস্তখত নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছে।
বিকুল আরো জানান, ৬ দিন ধরে আমরা আলাদা। রাস্তায় বের হলে শ্যামা, বিপুল, নিখিল ও সুবুধরা আমাদের এক ঘরে করার বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ (টিটকারি) করছে আর বলছে মামলা দিয়ে কি হবে। কিচ্ছু করতে পারবে না। সারাজীবন একঘরে থাকতে হবে।
বিকুল ও তার ভাইকে সমাজচ্যুত (একঘরে) করার সত্যতা নিশ্চিত করে গ্রামের মাতব্বর জগদীশ দাস জানান, ‘পঞ্চায়েত থেকে তাদের আলাদা করা হয়েছে। তারা চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ কিচ্ছু মানে না। আমি, মেম্বারও গ্রামের মুরব্বিরাও তাদেরকে একঘরি করেছি। কেউ পঞ্চায়েত না মানলে তারে কি করা ? সে জন্য সমাজচ্যুত করা হয়েছে। গ্রামের পূজা, বৈঠক, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ দেয়া হবে না। তারাও অনুষ্ঠানে আসতে পারবে না।’
ইউপি সদস্য বিকাশ চন্দ্র দাস জানান, ‘বিচারে সে রাজি হয়নি। পরে গ্রামের মুরব্বিসহ সবাই বসে তাদের একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেন। আমিও ছিলাম।’ বিচারে কেউ না বসলে তাকে একঘরে করা কি ঠিক? তাও একজন জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা কোন সমস্যা না।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন বলেন, ‘মারামারির বিষয় ছিল। ২ মাস আগের। আমিও সমাধান করতে চেয়েছিলাম। বাদী বিচারে রাজি হয়নি। একজনের মনমত না হলে সে বিচার না মানতে পারে। কিন্তু তাকে একঘরে করা ঠিক হয়নি। গায়ের জোরে সব চলে না। অন্যায়ভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে সরিয়ে দিলে সে তো খারাপ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।’
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান শুক্রবার (২১ জুন) জানান, ‘বিষয়টি কেউ জানায়নি। তারা এটা কোনোভাবে করতে পারেন না। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যারা এটা করেছেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’