ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বেঁচে যাওয়া ১১ সিলেটি দেশে ফিরেছেন
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৮:০৪,অপরাহ্ন ২২ মে ২০১৯
দেশে ফেরত আসাদের মধ্যে ৬জন সিলেট জেলার, ৩ জন হবিগঞ্জ জেলার ও ২ জন সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) তত্ত্বাধানে ও রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় মঙ্গলবার (২১ মে) ভোর ৬টার দিকে তারা ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ওই ১৫ বাংলাদেশী।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার (২২ মে) ভোরে সবাই বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বেশ কয়েকজনের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা ঢাকায় আছেন। অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় ফেরার জন্য ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছেন।
ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ মের ওই নৌকাডুবিতে প্রাণে বেঁচে যাওদের যারা দেশে ফেরত এসেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট জেলার মো. সাইদুল ইসলাম, সোহেল আহমেদ, মাসুম মিয়া, ইকবাল হোসেন, শাহেদ আহমেদ ও সিলেট সদর উপজেলার টুকের বাজার গোপাল গ্রামের মো. রুবেল আহমেদ। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নজরপুর গ্রামের মো. ফরিদ মিয়ার ছেলে মো. রাশেদ মিয়া, একই এলাকার মধু মিয়ার ছেলে সজিব ও সোহেল রানা। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গৌরনগর গ্রামের আব্দুল মতিন, একই জেলা ও উপজেলার তাজপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন হাসান।
রেড ক্রিসেন্টের ঢাকা সদর দপ্তরের প্রশাসক(পারিবারিক পুনঃযোগাযোগ স্থাপন বিভাগ) তথ্য অনুযায়ী, ‘ভূমধ্যসাগরে ৯ ও ১০ মে পরপর দু’টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। দুইদিনই নৌকায় বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। ৯ মে যে নৌকাটি ডুবে যায় সেটিতে অভিবাসী ছিল ৮১ জন। এই নৌকাটি ভূমধ্যসাগরে ছাড়ার ৮-১০ ঘণ্টা পর অর্থাৎ শুক্রবার রাতে আরেকটি নৌকা ছেড়ে দেয় দালালরা। সেটিতে অভিবাসী ছিল ৫৭ জন।
ওই নৌকায় থাকা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, তারা ইতালির উপকূলে চলে গিয়েছিল। উপকূলের কাছাকাছি যাওয়ার পর তাদের নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা স্রোতে ভাসতে ভাসতে ফের মাঝ সমুদ্রে চলে আসে। নৌকাটি একপর্যায়ে ডুবে যায়। তখন তিউনিসিয়ার নেভি ও জেলেরা ১৫ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে। রেড ক্রিসেন্ট তাদের চিকিৎসা দেয়। আইএমও তাদের নিয়ে কাজ শুরু করে। শেষের নৌকার অভিবাসীরাই ফিরেছেন মঙ্গলবার।
দেশে ফেরত টুকের বাজার গোপাল গ্রামের মো. রুবেল আহমেদের ছোট ভাই মো. রাসেল বলেন, আমার ভাই দেশে ফিরেছেন। আসার পরই তাদেরকে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালে তাদেরকে বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আরো বিভিন্ন অফিসে তাদেরকে নেওয়া হয়েছে। বিকাল ৪টার সময় ভাই বলেছে সায়েদাবাদ থেকে সিলেটের গাড়িতে উঠেছে বাড়ি আসার জন্য।
দেশে ফেরত হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের রাশেদ মিয়ার মা মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সে এখন ঢাকার একটি হোটেলে আছে। রাশেদ হাতে এবং পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই ঢাকায় চিকিৎসা করার পর বাড়িতে আসবে।
মনোয়ারা খাতুন আরো জানান, তার এলাকার আরো অনেকেই বিদেশ গিয়েছে। সেই সুবাদে তিনিও ধার দেনা করে সমিতি থেকে কিস্তি তুলে ১০ লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে বিদেশ পাঠান। এই জন্য ঢাকার দালাল বুলবুল ও লিভিয়ার দালাল পারভেজ তার সাথে যোগাযোগ করতেন। তবে নৌকাডুবির ঘটনার পর তারা কেউ যোগাযোগ করেনি। ওই সময় তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল বন্ধ পান।