অমর হয়ে থাকবেন – শহীদ জুয়েল
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৯:০৯,অপরাহ্ন ২৭ মার্চ ২০২৪
নিউজ ডেস্ক :: পিতৃহীন একমাত্র ছেলেটাকে যুদ্ধে ছাড়তে চাননি মা। চাননি চোখের আড়াল করতে। চাননি নিজের একমাত্র অবলম্বনটাকে যুদ্ধে ছেড়ে দিতে। কিন্তু কি আর করা, জুয়েলরা তো দেশের জন্যই জন্মায়। দেশের তরেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে চায়। ফলে জুয়েল একদিন নিজের একটা ছবি বাঁধিয়ে এনে দেয়ালে ঝুলিয়ে মাকে ডেকে বললেন বললেন— ‘মা, আমাকে মনে পড়লে এই ছবিটা দেখবা, আমারে দেখবা।’ বলেই যুদ্ধে চলে যান জুয়েল।
একের পর এক অপারেশন। তেমনি এক অপারেশন থেকে ফেরার পথে দেখা গেলো জুয়েলের আঙুল থেকে রক্ত ঝরছে৷ রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না কোনভাবে। গোপনে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো সতীর্থরা। ডাক্তারকে দাঁতে দাঁত চেপে জুয়েল শুধু একটা কথাই বললো- ‘প্লিজ স্যার, আর যাই করেন, আমার আঙ্গুল তিনটা রাইখেন। দেশ স্বাধীন হলে আমি ক্রিকেট খেলমু, ওপেনিংয়ে নামমু, ক্যাপ্টেন হমু।’
চিকিৎসা হলেই কি ক্ষত ঠিক হয়ে যায়! ফলে তাঁর বোন লেগে ছিলো সেবায়। একদিন জুয়েল বোনকে ডেকে বলে উঠলো— ‘বোন, আঙুলগুলো ঠিক না হলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্রিকেট খেলব কী করে, বল তো!’
অতঃপর প্রায় সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন সময় হঠাৎ তাঁর ক্যাম্পে পাক বাহিনীর হানা। ধরে নিয়ে যাওয়া হয় জুয়েলসহ বাকীদের। তথ্য চেয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয় জুয়েলদের। দেয়া হয় নানান শাস্তি, করা হয় অমানবিক অত্যাচার। কিন্তু জুয়েলরা কি তাতে মুখ খোলে আর! নির্যাতন সহ্য করে যায় দেশকে স্বাধীন করবে বলে। ফলে কোন তথ্য না পেয়ে একটা সময় গুলি করে দেয়া জুয়েলদের বুকে। ক্রিকেটার জুয়েল হয়ে যান শহীদ জুয়েল।
আজকের তামিম, সাকিব, মাশরাফিতে বাংলার যে সোনালী ক্রিকেট দেখছে বিশ্ব; তা এমনি এমনিই আসেনি। তা এসেছে শহীদ জুয়েলদের রক্তের স্রোতে ভেসে। তা এসেছে তাদের জীবনের বিনিময়ে। তাদের জীবনের বিনিময়েই তো লাল-সবুজের এই দেশটা আজ ‘বাংলাদেশ’ নাম নিয়ে খেলে যাচ্ছে বিশ্ব দরবারে। তাদের রক্তের বিনিময়েই তো এখন গ্যালারি জুড়ে জয়ধ্বনি উঠে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে!
স্বাধীনতার এই দিনে তোমাকে খুব মনে পড়ছে জুয়েল!
জানি না কেমন আছো, বিশ্বাস রাখি ভালোই থাকবে।
লেখা: আফফান উসামা
ছবি: BCSA