বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শান্তির পায়রা ডানা মেলবেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৬:১১,অপরাহ্ন ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বিশেষ প্রতিনিধি :: বান্দরবানে নিহত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবের মৃত্যুতে আমার একটি স্ট্যাটাস দেয়াতে অনেক ম্যাসাঞ্জারে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ । অনেকেই জানিয়েছেন, হাবিব ছিলেন পর্যটকদের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয়, কারণ তিনি পর্যটকদের রাস্তায় নিরাপত্তা পেট্রোল এবং রাত্রীকালীন পাস ইস্যু করতেন, মানবিক গুণাবলীতে ছিলেন অনন্য। তার কাছে কোন পর্যটক সাহায্য চেয়ে পাননি এমন ঘটনা ঘটেনি।
গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাতে বান্দরবানে রুমা জোনে জেএসএস সন্ত্রাসীদের একটি দল রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য আগমন করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাইং খিয়াং লেক আর্মি ক্যাম্প হতে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবের নেতৃত্বে একটি টহল দল বথি পাড়ার উদ্দেশ্যে গমন করে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় টহল দলটি উক্ত এলাকায় পৌঁছালে বথি পাড়ার নিকটস্থ একটি জুম ঘর থেকে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে। জবাবে সেনা টহল দলের সাহসী পাল্টা হামলায় জেএসএস মূল দলের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় পলায়নরত সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই শাহাদত বরণ করেন এবং সৈনিক ফিরোজ নামে একজন সেনাসদস্য ডানপায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
একজন সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার এমন গৌরবময় সাহসী আত্মত্যাগে আমরা অনুপ্রাণিত । যথাযথ সামরিক রীতিতে জাতীয় পতাকার সম্মানসহ তাকে দাফন করা হয়। তিনি তার নিজ জীবন বলি করলেন আমাদের নিরাপদ আগামীর জন্য । একজন সেনা সদস্যের জীবনে জাতীয় পতাকার গুরুত্ব অনেক, সেনা জীবেনে দিনের কাজ শুরু হয় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে, এই জাতীয় পতাকাকে সমুন্নত রাখতে সেনা সদস্য জীবন দিতে জানে, তেমনি মৃত্যু হলে সেই জাতীয় পতাকা কফিনে জড়িয়ে তাকে সম্মানের সাথে চির বিদায় জানানো হয় ।
গত ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে সংগঠিত বন্দুক যুদ্ধে তিন জন দুষ্কৃতিকারী মৃত্যুর ঘটনায় অনেকেই ইনবক্সে প্রতিক্রীয়া দেখিয়েছেন, শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নে সশস্ত্র অভিযানের বিরোধীতা করেছেন। বিশেষকরে জেএল্এ, জেএসএস, এএলপি, এএ, মিজো, লাল বাহিনী, টিএনপি এসব গ্রুপের সদস্য ও সমর্থকরা ।
পাহাড়ে সশস্ত্র চাঁদাবাজি কখনই শান্তি চুক্তির সম্পূরক হতে পারে না । ঘটনাস্থল থেকে উদ্দার করা এসএমজি, বন্দুক এবং গোলাবারদ স্পষ্টত চুক্তির লঙ্ঘন । প্রতিটি জীবন মূল্যবান কিন্তু আপনি যদি অন্যের বন্দুক নিজের ঘাড়ে রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ আপনাকেই হতে হবে । তিনজন দুস্কৃতিকারীর নিথর দেহের ছবি দেখলাম, বয়স বেশী না, এরা কারো ভাই, কারো সন্তান । এরা হতে পারত ডাক্তার, প্রকৌশলী, খেলোয়াড়, পর্যটন সেবার উদ্যোক্তা আরো অনেক সম্ভাবনার । কিন্তু কোন এক জন বিচ্ছিন্ন নেতার প্ররোচনায়, ক্ষমতা আর টাকার নেশায় তারা হাতে অস্ত্র নিয়ে এই কালিমাময় মৃত্যু মেনে নিতে হলো । ঘটনা স্থলে কথিত নেতা বা তাদের পরিবারের কোন সদস্যদের দেখা যায় না, তারা নিরাপদ দূরত্বে, আরাম আয়েশের জীবন ভোগ করে, আর আগুন নিয়ে খেলার মাঠে অবুঝ তরুণদের ঠেলে দেয় । জেএলএ গ্রুপ্ টি সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে আগ্নেয়াস্ত্র, টাকা, ইউনিফর্মের ছবি পোস্ট করে প্রলোভন দেখাচ্ছে আর দেশ বিরোধী প্রপাগান্ডার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে । আপনি যখনই নিজের শিক্ষা, পরিবার, ধর্মীয় অনুশাষন ভুলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম লেখান, নিজের অজান্তেই নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করেন । সে আঘাতে আপনার পতন নিশ্চিত, দুদিন আগে বা পরে, আপনি হবেন পেপারের হেড লাইন, ব্রেকিং নিউজ, পরিবারের কান্নার কারণ ।
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা রক্তচোষা জোকের মতো, যে দেশের মানচিত্রে থাকে সে দেশের তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করে দেশের ভিতরে ভয়ের রাজত্য কায়েম করতে চায় । এদের মানষিক দৈন্যতা আজ উন্মোচিত নিজেদের সন্তান পরিবারকে সব বিপদ থেকে, কথিত বিপ্লব থেকে নিরাপদ যায়গায় রাখে আর তরুণদের রক্তের জুয়া খেলে । আসলে পাহাড়ীদের স্বার্থের সাথে জুম্ম ল্যান্ডের স্বপ্নে বিভোর নেতাদের কোন সম্পর্ক নেই , রক্তপাত তাদের চাদাবাজি ব্যবসা বাচিয়ে রাখার কৌশল মাত্র ।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনা বাহিনী নিজ প্রফেশনাল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ । তাই সবাইকে এ সময় সাবধানে পদক্ষেপ নিতে হবে । নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের না বলতে হবে । তবেই পাহাড়ী জন গোস্টির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শান্তির পায়রা ডানা মেলবে ।
লেখক পরিচিতি :: স্কোয়াড্রন লীডার সাদরুল (অবঃ)সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।