ক্যাসিনোর টাকা গ্রামের মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান ব্যারিস্টার সুমনের
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২৯:৩০,অপরাহ্ন ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ক্যাসিনো বা অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা উদ্ধার করে সেগুলো গ্রামগঞ্জের মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যু তুলে ধরে আলোচনায় আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আজ (রোববার) তার নিজের এলাকা হবিগঞ্জের ৫ নম্বর শানখোলা ইউনিয়নের বাজেশতং গ্রামে একটি কাঠের ব্রিজ উদ্বোধনকালে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমার নিজের এলাকা হবিগঞ্জের ৫ নম্বর শানখোলা ইউনিয়নের বাজেশতং গ্রাম। গ্রামের মানুষের আবেদন অনুযায়ী এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছি। এ ব্রিজটি উদ্বোধন করতে এসেছি। আজকে আমার ক্ষুদ্র জীবনের ২৬তম কাঠের ব্রিজের উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে একটা ক্যাসিনোর জুয়ার ঘরে ১২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আরও কত কোটি টাকা যে পাওয়া গেছে? কেউ বলে দেড়শ কোটি? কেউ বলে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। জুয়ার ঘরে এত টাকা পাওয়া যায়! কিন্তু যে জায়গাগুলোতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে সে জায়গাগুলোর কেউ খবর রাখে না। এটা ভিতরের একটা গ্রাম। এমন জায়গা সাধারণত নেতাদের চোখ পড়ে না। নেতারা এসব জায়গায় আসেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্রিজটা বানানোর মধ্য দিয়ে একটি কথা বলতে চাই যে, ক্যাসিনোর টাকা, যেগুলো অবৈধভাবে উপার্জনের টাকা, এ টাকাগুলো কী সরকারের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে নিয়ে আসা যায় কি-না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন থাকবে যে, যারাই অবৈধভাবে টাকা আয় করে সেগুলো ধরে গ্রামে নিয়ে আসা যায় কি-না। আর একটা হচ্ছে যারা অনেক সফল, আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে যদি ২৬টি কাঠের ব্রিজ করতে পারি, আমি চাই যে এভাবে যারা সফল আছেন, তারা নিজেদের জন্মস্থানে গিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন। এ রকম বহু মানুষের কষ্ট হয়তো ১ লাখ টাকা দিয়ে একটা ব্রিজ বানিয়ে দিয়ে কমানো যাবে।’
এ সময় তিনি বাজেশতং গ্রামের এক মুরব্বিকে জিজ্ঞেস করেন যে, এখানে ব্রিজের জন্য কত দিনের দাবি ছিল আপনাদের? এমন প্রশ্নে ওই মুরব্বি বলেন, এটা তাদের বহুদিনের দাবি। এটা একটা অবহেলিত গ্রাম।
তিনি বলেন, আমরা বার বার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু নেতাকর্মীরা আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে না।
এ প্রেক্ষিতে সুমন বলেন, সব নেতা এক রকম হয় না। আস্তে আস্তে যে গণজাগরণ হচ্ছে, ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ভালো-মন্দ, জনগণের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু নারীকে দেখিয়ে সুমন বলেন, এনারা আজকে ব্রিজের উপর দিয়ে পার হবেন। বর্ষাকালে কত বাচ্চা আর কত মায়ের যে, কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকায় একটি ব্রিজ বানানো যায়। অথচ আমি শুনলাম ঢাকা শহরে নাকি এক রাতে ১২৫ কোটি টাকা শুধু জুয়ায় লেনদেন হয়। যে দেশে এক রাতে এত টাকার জুয়া হয়, সেদেশে একটা ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকার একটা ব্রিজের জন্য কত মানুষ যে কষ্ট করছে আল্লাহই ভালো জানেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটা উপজেলায় ২৬টি ব্রিজ বানানোর জায়গা পেয়েছি, সিলেটের মতো একটা জায়গায়। যেটাকে মানুষ মনে করে এরা মনে হয় উন্নয়নের উপরে উঠে গেছে! তাহলে দেখেন যারা ঢাকায় বসে বসে বড় বড় বক্তব্য দেন, তাদের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল আছে কি-না?
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি শুধু বলতে চাই আমার নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা ধারণ করি, বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শকে ধারণ করতে হলে অবশ্যই মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশে না দাঁড়ালে আপনি যতই বলেন না কেনো আসলে আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন না।
অন্যান্য আদর্শে যারা বিশ্বাসী তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের নেতাদের যদি আদর্শ হয় মানুষের কল্যাণ করা। আমাদের সাথে আপনাদের কল্যাণের প্রতিযোগিতা হোক। আপনারা ব্রিজ বানান। সবাই মিলে মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়াই। যদি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন তখন না হয় ক্ষমতা আপনারা নেবেন। মানুষের হৃদয়ে যারা জায়গা করে নেবে তারাই ক্ষমতায় যাবে। মনে রাখবেন নিজের হাতকে অপরিষ্কার রেখে অন্যের দিকে আঙুল তোলা যায় না।
তিনি বলেন, আজকে ২৬তম ব্রিজ উদ্বোধন করে ২৭তম ব্রিজের জন্য এগিয়ে যাব। যতদিন কাজ করার সক্ষমতা আছে ততদিন মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করবো। অন্তত নিজের জন্মস্থানটাকে আমি সুরক্ষা দিতে চাই।