ডেঙ্গু চিকিৎসায় ক্ষতি সাড়ে তিনশ কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৩:২৬,অপরাহ্ন ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
চলতি বছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপে স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তবে এর পরিমাণ নিয়ে এখনো সরকারি কোনো হিসাব আসেনি। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালের রোগীদের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছে, ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয়ে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরাসরি খরচ হয়েছে অন্তত ২২৬ কোটি। হাসপাতাল ভেদে একেকজন রোগী খরচ করেছেন প্রায় ১১ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। তারা জানিয়েছে, পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসা নেয়া বিপুল সংখ্যক রোগী ও সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করা হবে।
এ বছর জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় ৭৭ হাজার ডেঙ্গু রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সরকারি তথ্যের উপর ভিত্তি করে এক সমীক্ষা করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি ফি, শয্যা ভাড়া, পরীক্ষার ফি, ডাক্তার ফি, ওষুধ ও খাবার খরচ মিলিয়ে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী প্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৯৫২ টাকা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো রোগীর খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৩ টাকা।
বেসরকারি নামি-দামি হাসপাতালে দুই লাখ ১৭ হাজার ১৪ টাকা এবং সাধারণ হাসপাতালে ৪১ হাজার ৩১৯ হাজার টাকার ব্যয়ের তথ্যও রয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঢাকা শহরের অন্তত ১২টি হাসপাতালের কয়েকশ’ রোগীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। ঢাকার ভেতরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে যাদের অবস্থা খারাপ তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা মানে তাকে থাকতে হয়েছে। এখানে সরাসরি একটা খরচ। এর বাইরে রোগীর সঙ্গে অন্তত দুইজন এটেনডেন্ট থাকতে হয়েছে। এদের কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে। এ তিন জনের অর্থনৈতিক মূল্য তারা বের করেছেন।
এছাড়া যারা মারা গেছেন। গড় হিসাবে তাদের অধিকাংশই অন্তত ৩৫ বছর কন্ট্রিবিউট করতে পারতো। বর্তমান মাথা পিছু আয় বিবেচনা করে তাদের অনুমিত কন্ট্রিবিউশনের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা তুলে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি এই রোগ থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধে স্প্রে, কয়েল, মশারিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনার খরচ গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে। এসব খরচের মধ্যে এলে ব্যয় আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বাইরের রোগীদের খরচ হিসাব করা যায়নি। টেস্টে কারও পজিটিভি, কারও নেগেটিভ এসেছে। ধরা পড়লেও আর্লি স্টেজ হওয়ায় ডাক্তার তাদের বাসায় পাঠিয়েছে, হাসপাতালে সিট না থাকায় ভর্তি হতে পারেনি। সব মিলিয়ে এ খরচ আরও ১০০ কোটি যোগ হতে পারতো।
সমীক্ষার কাজ অব্যাহত আছে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, সারা বছরের তথ্য যোগাড় না করা গেলেও আগামী ১৫ অক্টোবর নাগাদ কাজ শেষে তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারবেন।
অপ্রত্যাশিত এ ক্ষতি এড়াতে এখনই যুগোপযোগী মহাপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। তারা বলেন, কাউকে দায়ী না করে একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগুলে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে।
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, সরকারি হিসাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০, যাদের গড় বয়স ৩০। মাথাপিছু আয়ের নিরিখে যে ৬০ জন মারা গেছেন তাদের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা।
সৌজন্য : মেডিভয়েস।