প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০২:৫০,অপরাহ্ন ২১ আগস্ট ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর এই নিয়ে মোট ১৯ বার হামলা চালানো হয়েছে।
হত্যা চেষ্টার দগদগে স্মৃতি একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। কিন্তু এটাই প্রথম নয়। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিপারে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হলেও বিদেশে অবস্থান করার কারণে সে রাতে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
কিন্তু শেখ হাসিনার ওপর থেকে লক্ষ্য সরে যায়নি। তারই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আঘাত আসে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে। কিন্তু তার ওপর আগেও এসেছে হামলা। আর গুনে গুনে সে হামলা হয়েছে ১৯ বার।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার বছরই তার উপর হামলা চালায় ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তার উপর ২য় হামলা হয়, চট্টগ্রামে। লালদীঘি ময়দানে ৮ দলীয় জোটের সমাবেশ ছিল। চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে মিছিল করে সমাবেশস্থলে যাবার পথে ট্রাক মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়।পুলিশ এবং বিডিআর গুলি করে। এতে সাতজন নিহত হন, আহত হন তিনশ জন। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই পুলিশ এবং বিডিআর গুলি করেছিলো।
১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা। ইত্তেফাকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদের ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন ঐ বাসভবনেই ছিলেন। হামলাকারীরা ৭/৮ মিনিট ধরে বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালায় ও একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়নি।
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে বেলা আড়াইটার দিকে তিনি গ্রিনরোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান। ‘গাড়ি হইতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির ওয়াহিদের নেতৃত্বে বিএনপি’র কর্মীরা গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ করিতে শুরু করে। ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও বোমাবর্ষণ হয়।’( দৈনিক ইত্তেফাক ১২.০৯.১৯৯১)
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়।
উল্লেখ্য, এবছরের ৩ জুলাই শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়ে নয়জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
একই মামলায় ২৫ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তার উপর গুলিবর্ষণ করা হয় ।
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
১৯৯৯ সালের ১২ জুলাই ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্রকন্যাসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণার ই-মেইল পাঠায়।পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যা, গণতন্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং বিদ্বেষ সৃষ্টির লক্ষ্যে ই-মেইল প্রেরণের অভিযোগে শোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে এবং হেলিপ্যাডের কাছে ২০ জুলাই ৭৬ কেজি ওজনের বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। ২২ জুলাই বেলা সাড়ে দশটায় শেখ লুৎফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার কথা ছিলো।
২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিলো তার। সেখানে পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ । পরে জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ স্বীকার করে, তারাই হত্যা চেষ্টা চালিয়েছিলো।
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে রাত ৮ টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়। আগেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা। হরকাতুল জিহাদ হুজি এই হত্যা চেষ্টার কথা স্বীকার করে।
২০০২ এর ৪ মার্চ যুবদল ক্যাডার খালিদ বিন হেদায়েত নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায়।
২০০২ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামাত নেতা-কর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। ক্ষমতাসীন জোটের এমপির প্রত্যক্ষ মদদে জোট সন্ত্রাসীরা শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায় বলে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে জামায়াত-বিএনপি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও নিহত হন আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী। হামলায় আরও ৪শ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে সেনাসমর্থিত ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেসময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত বিষ দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ‘স্লো পয়জনিং’ এর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা।
২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র এবং আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। সেজন্য শ্রীলংকার সেই সন্ত্রাসবাদী গ্রুপকে আগাম পেমেন্টও দেওয়া হয়। আততায়ীদের টিমটি গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা।
২০১১ সালের ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো যা ব্যর্থ হয়ে যায়। উইকিলিকস প্রকাশিত সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেজর ডালিম এ অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলো। হংকং, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বসে এ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা চলছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্য এতে জড়িত ছিলেন। হংকংয়ে বসবাসরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ এ পরিকল্পনায় অর্থায়ন করে বলে গোপন বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকাশিত নথি অনুসারে, এ ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টা এবং পরিকল্পনায় খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা ছিলো। (দৈনিক যুগান্তর, ৪ জুলাই, ২০১৫)
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় এক বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সুবহান মন্ডল নামে দু’জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় জেএমবি জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় ঘটনায় জড়িত হিসেবে ১১ জনের তালিকা প্রকাশ করে এনআইএ। এর মধ্যে পল্লী চিকিৎসক শাহানুরও ছিলেন। ( দৈনিক সমকাল ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ এবং দৈনিক যুগান্তর ৯ নভেম্বর, ২০১৪)
২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কারওয়ানবাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা হয়।