প্রযুক্তির লাগামহীন অপব্যবহার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৯:১৩,অপরাহ্ন ০৮ জুলাই ২০১৯
তাহমীদ ইশাদ রিপন।।
গভীর রাতে এক পরিচিত বড় ভাইয়ের ফোন কল পেয়ে ঘুম ভাঙ্গল।হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে হাউমাউ কান্নার আওয়াজ শোনে মুহূর্তেই ঘুম জড়ানো ভাব উদাও হয়ে গেল। আটান্ন মিনিট চব্বিশ সেকেন্ডের দীর্ঘ কথোপকথনের বেশীরভাগ সময় কাটল মানুষটার কান্না আর বিলাপ শোনে। ভাইটির ঢাকায় রয়েছে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সুন্দরী স্ত্রী আর সোনার টুকরা দুই ছেলে সন্তান নিয়ে সুখী সংসার। তাঁর এমন কান্নাকাটি কারণ উদগাটন করতে গিয়ে যা জানলাম তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং বিব্রতকর। ভাইটি ব্যবসা, সংসার আর আল্লাহ্ বিল্লাহ্ করে ব্যস্ত সময় পার করেন। সহজ সরল মানুষ । স্মার্ট ফোন কিংবা ভার্চুয়াল দুনিয়ার কিছুতেই তার বিচরণ নাই। ব্যাবসায়ীক কাজে সেই মান্ধাতা আমলের মোবাইল ফোন-সেট ব্যবহার করেন তিনি কিন্তু প্রিয়তমা স্ত্রীর আবদারে তাকে লেটেষ্ট মডেলের স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছেন। আর এই ফোনই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। স্মার্ট ফোন আর ফেইসবুকের সুবাদে তার স্ত্রী দুই মাস আগে বাচ্চাদের ফেলে বিপুল পরিমাণ টাকাপয়সা,স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে তার এক ফেইসবুক বন্ধুর হাত ধরে পালিয়েছে। ছোট দুই ছেলেসন্তান নিয়ে ভাই এখন অকুল পাথারে পড়েছেন। ব্যবসাপাতি লাটে তুলে দুই ছেলে বুকে নিয়ে ভাইয়ের এখন দিন কাটে কেঁদে কেঁদে।
ইদানীং নাকি সেই সুন্দরী স্ত্রী তাকে ফোন করে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে সংসারে ফিরে আসতে চাইছে। সে ব্যাপারে তাঁর কি করনীয় সেটা জানার জন্যপরামর্শ চাইছেন আমার কাছে। বাকরূদ্ধ আমি এই মানুষকে কি পরামর্শ দেব, কি দিয়ে সাহায্য করবো এই ভাবনায় অস্থির হয়েই জানতে চাইলাম, আপনার কি ইচ্ছা ভাই?
উনি বললেন, মাফ করার চেয়ে বড় কাজ তো এই দুনিয়ায় আর কিছু নাই ভাই। আমার দুইটা ছেলে আছে। ওদের মা হারা করে কি লাভ বলেন? মা ছাড়া বাচ্চারা মানুষ হয় না। তাই আমার মনে কষ্ট হলেও ছেলেদের ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্র নামে ওরে আমি মাফ করে দিলাম কিন্তু এমন কাজ যেন আর জীবনেও সে করতে না পারে তার জন্য ষ্ট্যাম্পে একটা চুক্তিনামা করার কথা ভাবছি। কি বলবো বুঝে উঠতে না পেরে বললাম,ষ্ট্যাম্পে চুক্তি করে কি বিশ্বাস ফিরে আসে? সংসার হয়? উনি যদি এমন কাজ আবার করেন তাহলে এই চুক্তি দিয়ে আপনি তখন কি করবেন? উনি বললেন,কী করবো তা তো জানিনা ।তবে তখন অন্তত আমি ছেলেদের বলতে পারবো যে,আমি তোমাদের মাকে নিয়ে সংসার করার জন্য সবরকম চেষ্টা করেছিলাম। লজ্জায় আমার আর কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা ছিলোনা। তাই ভেবেচিন্তে আমিই রাতে তাঁকে ফোন দিবো বলে তখনকার মতো ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলাম।
নতুন করে আরেকবার বুঝলাম, মানুষ দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, অতি সরলমনা মানুষের স্থান দুনিয়াতে ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে। প্রযুক্তি নামক আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি? সব ক্ষেত্রেই যেনো আমরা নিজেদের মাত্রাজ্ঞান ভুলে যাচ্ছি।মিথ্যা-প্রতারণা -ছলনা আর লালসার অপঘাতে জর্জরিত এই প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাত্রায় আমাদের ভবিষ্যৎ কি?