জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মাদরাসা অধ্যক্ষ বড়লেখার আহাদ খান’র একান্ত সাক্ষাৎকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০৩:৪১,অপরাহ্ন ০৭ জুলাই ২০১৯
বড়লেখার ডাক.কম: জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মাদরাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়াতে আপনার অনুভূতি কি?
আব্দুল আহাদ খান: এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। এর জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া জানাই। আমি মনে করি এ অর্জনের মধ্য দিয়ে আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমি সবসময় আমার শিক্ষার্থীদের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস এ অর্জন আমার শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
বড়লেখার ডাক.কম: একজন অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবে দেশের মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি?
আব্দুল আহাদ খান:ইসলামের মহান আদর্শের আলোকে নৈতিক চরিত্র গঠন তথা একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প নেই।আমি মনে করি দেশের মাদরাসা শিক্ষাকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরও আধুনিক হতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা নিজ উদ্যোগে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব,মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ ও সার্বক্ষনিক “ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ” স্থাপন করেছি।
বড়লেখার ডাক.কম: একজন অধ্যক্ষ হিসেবে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত মনে করেন?
আব্দুল আহাদ খান: আসলে শিক্ষার প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, মননশীল সাংস্কৃতিক চর্চা ও সেবাধর্মী বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এর ব্যবহার বা প্রয়োগ ব্যতীত আধুনিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ। তাই, আমি এর ব্যবহারে আমার ছাত্রীদের সবসময় উদ্বুদ্ধ করে থাকি।
বড়লেখার ডাক.কম: আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কেমন ফলাফল করছে?
আব্দুল আহাদ খান: বর্তমানে প্রথম শ্রেণী থেকে আলিম দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত ৪২৩ ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। প্রতি বছর ইবতেদায়ী, জেডিসি, দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় মাদরাসাটি উপজেলার মধ্যে সেরা ফলাফল অর্জন করে।২০১৯সালের দাখিল পরীক্ষায় ২’জন জিপিএ-৫ সহ শতভাগ কৃতকার্য হয়েছে। এবারের শিক্ষা সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ইটাউরী মহিলা আলিম মাদরাসা ৩টি ক্যাটাগরিতে সাফল্য অর্জন করেছে।
বড়লেখার ডাক.কম: মাদরাসা পরিচালনায় একজন অধ্যক্ষকে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?
আব্দুল আহাদ খান: আমি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। আমার সহকর্মী ও পরিচালনা কমিটি এলাকাবাসী এবং প্রশাসন সব সময় সহযোগিতা করেন। অধ্যক্ষ যদি নিজেকে অন্যদের সহকর্মী না ভেবে সবসময় বস ভাবেন, তাহলে সমস্যা হতে পারে। আমার সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে কাজ করতে উৎসাহ যোগায়।
বড়লেখার ডাক.কম: অনেক অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, একজন অধ্যক্ষকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়,কাজ করার সময় সেরকম ক্ষমতা দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বলুন।
আব্দুল আহাদ খান: আমি এই বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আমি মনে করি, শিক্ষাঙ্গন কোনো ক্ষমতা দেখানোর জায়গা নয়। মাদরাসার কাজ করার ক্ষেত্রে আমি পরিচালনা কিমিটি থেকে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। আমি মনে করি সবখানে এসব অভিযোগ ঠিক না।
বড়লেখার ডাক.কম: বড়লেখার নারী শিক্ষায় ইটাউরী মহিলা আলীম মাদরাসার ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলুন।
আব্দুল আহাদ খান: ইটাউরী মহিলা আলিম মাদরাসাটি জেলার প্রথম নারী দ্বীনি শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান। নারীশিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
বড়লেখার ডাক.কম: এই মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর কি কি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন এবং আর কি কি কাজ জরুরী-ভাবে করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
আব্দুল আহাদ খান: আমি যোগদান করার আগে গোলাপগঞ্জের একটি এমপিওভূক্ত মাদরাসায় শিক্ষকতা করতাম। ইটাউরী মহিলা আলীম মাদরাসা তখনও এমপিওভূক্ত হয়নি জেনেও চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আমি এখানে এসে যোগদান করি।আলহাম্দুলিল্লাহ, সকলের সহযোগিতায় মাদরাসাটি দাখিল এমপিওভূক্ত হয়েছে এবং আলীম প্রক্রিয়াধীন। প্রবাসী এবং স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় মাদরাসার সুন্দর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। মাদরাসায় একটি লাইব্রেরি ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ করা হয়েছে। ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটি পিক-আপ গাড়ীও রয়েছে। এছাড়াও মাদরাসায় ছাত্রীদের নামাজের জন্য সুবিশাল নামাজের কক্ষ করা হয়েছে। ছাত্রীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রতি বছর “শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ” উদযাপন করা হয় এবং প্রতিভা নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা “ভার্চুয়াল শ্রেণীকক্ষের” মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।বর্তমানে মাদরাসায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা এবং আলীম এমপিওভূক্তি করা অতীব জরুরী বলে মনে করি।
বড়লেখার ডাক.কম: এ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আব্দুল আহাদ খান: ইটাউরী মহিলা আলীম মাদরাসাকে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে দেশের অনন্য মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি ।
বড়লেখার ডাক.কম: সময় নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুল আহাদ খান: বড়লেখার ডাক.কম পরিবারকেও অনেক ধন্যবাদ।