বিবেক তুমি জাগ্রত হবে কবে??
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৩:৫৯,অপরাহ্ন ২৮ জুন ২০১৯
সিনেমাগুলোতে দেখা যেতো ভিলেনরা জনসম্মুখে নায়ক-নায়িকার বাবা-মা’য়েদের খুন করছে আর ভয়ে কেউ মুখ খুলা তো দূরে থাক প্রতিবাদের ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেলতো, আবার অনেক সময় দেখা যেতো নায়কের মা’য়ের সামনে তার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করছে ভিলেনরা কিন্তু নায়কের মা ছাড়া আর কেউ ভিলেনদের বাধা দিতে আসতো না কারণ নিজেদের প্রাণের ভয়ে তবে তারা চেয়ে চেয়ে সেই দৃশ্যগুলো দেখত তখন কিন্তু স্মার্ট ফোনের প্রচলন ছিল না আর না হলে আরও কিছু দৃশ্য সংযোজন করতে পারতেন ছবির পরিচালক।
এখন যুগ পাল্টাইছে আগের মতো আর সাপ্তাহিক সিনেমার অপেক্ষা করতে হয়না, বর্তমানে হাতে হাতে চলে এসেছে মিডিয়া জগৎয়ের যতোসব বিনোদন ছোট-বড় সবাই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবই উপভোগ করছে আর তাদের তৈরীকৃত বিভিন্ন সাইটে প্রতিদিন যোগ করছে নানান ধরণের অনুষ্ঠান যা বর্তমান যুগের জন্য সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হচ্ছে। যুগ পাল্টানোর সাথে সাথে মানুষের মধ্যে থেকে আন্তরিকতা,ভালোবাসা আর বিবেক নামক সৌজন্যতা বিলীন হয়ে গেছে, বিলীন হয়ে গেছে একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আফসোস হয় সেই সোনালী দিনগুলোর স্মৃতিমাখা সময়টুকুর জন্য।
এবার আসা যাক মুল কথায়, সম্প্রতি সময়ে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটে বেশকিছু সংখ্যক যাত্রী আহত হয়েছেন আর নিহত হয়েছেন প্রায় ৮ জন, দূর্ঘটনা কবলিত জায়গায় যখন পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন পেশাজীবী’র মানুষজন উদ্ধার অভিজানে ব্যস্ত তখন একদল বিবেকহীন লোকেরা লাইভ,ভিডিও ও ছবি তুলতে মরিয়া হয়ে উটে যার কারণে উদ্ধারকর্মীদের কাজের ব্যগাত ঘটে। ছবি তুলবেন,লাইভ করবেন ও ভিডিও করবেন ভালো কথা কারণ বিষয়টা সবাইকে জানানোর দরকার কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে সেগুলো করা কি ঠিক হয়েছে? আপাতত অল্প সময়ে সেগুলো শেষ করে নিজেরাই উদ্ধার অভিজানে নামতে পারতেন। এখানেও সেই বাংলা সিনেমার ভিলেন আর নায়কের বাবা-মায়ের করুণ অবস্থার চিত্র সবাই উপভোগ করছে কিন্তু তফাৎটা সে যুগে শুধুই চেয়ে চেয়ে নিজেরা দেখেছে আর বর্তমান যুগে স্মার্ট ফোনের বদৌলতে ভাইরালের প্রতিযোগীতায় নেমেছে।
গতকাল বরগুনায় স্ত্রী’র সামনে স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা একমাত্র তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ সন্ত্রাসীদের বাধা দিতে আসেনি। সন্ত্রাসীদের সাথে তিনি একাই যুদ্ধ করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না, আর বাকী সবাই শুটিং দেখেছে আর লাইভ,ভিডিও,ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিল,কার আগে কে ছবি তুলে,ভডিও করে ভাইরাল করতে পারে সে প্রতিযোগীতায় সবাই ব্যস্ত ছিলো। অথচ কেউ একজন পুলিশ কন্ট্রোলরুমে একটা ফোন পর্যন্ত করলো না, এই বিবেকহীন মানুষগুলো বাংলা সিনেমার মতো কাহিনী মনে করেছিলো যা বাংলা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে যতোটুকু জেনেছি সেখানে যে কজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই নির্মম হত্যাকান্ড দেখেছেন ও যে কজন ছবি,ভিডিও,লাইভ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সবাই যদি একত্রে বাধা প্রদান করতেন তাহলে এরকম নির্মম ঘটনা ঘটার কোন অবকাশ ছিলোনা, কতোটা বিকারগ্রস্থ বিবেক হলে এরকম করে মানুষজন।
এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে কিছু বিবেকহীন মানুষের সামনে একজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করলো সন্ত্রাসীরা আর আমরা ইন্টারনেটে ভাইরাল করার জন্য ছবি,ভিডিও,লাইভের প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত ছিলাম আর কেউ কেউ সিনামার শুটিং ভেবে সেটাকে খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করলাম এবং আমাদের ঘুমন্ত বিবেকের কারণে সন্ত্রাসীদের সাহস’কে আরও একধাপ উন্নতির দিকে দাবিত করলাম।
সিনেমার দৃশ্যে এরকম হর-হামেশাই দেখা যায় তাই বলে ঘটনাটা সিনেমার কোন শুটিং ছিলোনা,ঘটনাটা ছিলো বাস্তব এবং সেটা সবাই বুজতে পারছে।
তফাৎটা ছিলো বিবেকের,প্রতিবাদের,আন্তরিকতার আর ভ্রতৃত্বর আসলে এই যুগ কিছু সংখ্যক লোকের ভিতরে নূন্যতম বিবেকবোধ তো দূরে থাক আন্তরিকতাও বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর কেউ সহযোগীতার হাত বাড়ায় না, শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার হাত বাড়াতে ব্যস্ত থাকে।
পুর্বের ঘটনা যাই ঘটুক এভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাস্তার মধ্যে নির্মম হত্যাকান্ড জগন্যতম অপরাধের সামিল। ধিক্কার জানাই সেই সব বিকারগ্রস্থ ঘুমন্ত বিবেকহীন মানুষদের প্রতি।
ক্ষমা করো হে সাহসী নারী তুমার নিজের প্রাণ বাজী রেখে একাই লড়েছো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তুমিই সকলের অনুপ্রেরণা আর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ ঘুনেধরা সমাজ এখন ভাইরাল প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত এরা শুধু উৎসাহ নিয়ে উপভোগ করতে পারবে কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারেনা তবে এদের চেতনার বুলিতে মিডিয়া পাড়া গরম থাকে।
কোনদিন একদিন যখন আপনার অথবা আমার সাথে এরকম ঘটনা ঘটবে তখন বোধহয় আমাদের চেতনা জাগ্রত হবে!
বিবেক তুমি জাগ্রত হতে আর কতো দেরী পাঞ্জেরী…!