সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী আকদ্দছ আলী- ৪০ বছরের চলমান ভূমি জটিলতা থেকে মায়ের জমি ফিরে পাওয়ার আকুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৬:৪১,অপরাহ্ন ২৭ জুন ২০২৪
কুলাউড়া(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৪০ বছরের চলমান ভূমি জটিলতা থেকে মায়ের জমি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন আকদ্দছ আলী নামের এক ভূক্তভোগী। আকদ্দছ আলী কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মনসুর গ্রামের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেল ৩টায় কুলাউড়ার পশ্চিম মনসুরস্থ নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এই আকুতি জানান তিনি।
এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর দুই পুত্র দুদু ও সালাউদ্দিনকে নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, কুলাউড়ার মনসুর নিজ মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৪২৩ শতক ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধপূর্ণ ওই ভূমির মধ্যে আমাদের দখলে ৭০ শতক রয়েছে। সেই ৭০ শতক ভূমিতে আমরা বসবাস করছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই ভূমি নিয়ে আইনী লড়াই করে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন দপ্তরে আমরা আবেদন করেছি। আমরা কোন সংঘাত চাইনা, সামাজিকভাবে সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণমান্যব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সুন্দর সমাধান চাই। ভূমির সঠিক কাগজাদির ভিত্তিতে আমরা যদি ভূমির মালিক হই তাহলে আমরা মালিক। কাগজাদি সঠিক না হলে আমরা ভূমির মালিক হিসেবে দাবি করবো না। ভূমির সঠিক কাগজের ভিত্তিতে যদি মসজিদ-মাদ্রাসা ওই ভূমির মালিক হয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। কিন্তু আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল উপর্যপুরি হুমকি প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাই আমরা দারুণ আতঙ্কে রয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আকদ্দছ আলীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন তাঁর ছেলে সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন ছলছাতুরী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আইন বিরোধী কার্যকলাপ ও যোগাযোগমূলে কাগজ তৈরি করে আমার মৌরসী স্বত্ব মালিকানাধীন ভূমির দখল ও মালিকানা নিয়ে এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে মানুষদেরকে বিব্রত করার মাধ্যমে সম্মানহানি করার পায়তারা করছে। তাদের বক্তব্য যে, আমরা নাকি মসজিদ-মাদ্রাসার ভূমি দখল করেছি। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার পূর্ব পুরুষ প্র-পিতামহ (পৈদ দাদা) হাজী মোঃ কটু মিয়া, তাঁর ছেলে মজর উদ্দিন, মেয়ে আবেজা বিবি এস.এ খতিয়ান মতে ১৯৪৬ সালের ২৬ অক্টোবর তারিখের রেজিস্ট্রারীকৃত ৩৬০৭ নং ওয়্কাফ দলিলে ভূমির মালিক হন। ওই দলিলের ১৭ ও ১৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ওয়্কাফ দলিলের ভূমি মালিকগণ ভোগ ব্যবহার করে ভূমির আয় হতে মসজিদ ও মক্তবে ৫০ পঞ্চাশ টাকা বেতন বাবদ পরিশোধ করবেন এবং ১নং দলিল গ্রহিতা কটু মিয়া উক্ত দলিলের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকবেন মর্মে উল্লেখ আছে।
তারা আরো বলেন, সাবরেজিস্টার, আইনজীবি, দলিল লেখক ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ১৯৪৬ সালের ৩৬০৭নং দলিল বিগত ১৯৫১ইং সনের ২৫ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার্ডকৃত ৩৫৮২ নং ওয়্কাফ সংশোধন দলিলে উক্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে হাজী কটু মিয়া এবং আবেজা বিবির নামে হলে উক্ত ব্যক্তিগণ মালিক বিদ্যমান থাকেন। ওইসময় মজর উদ্দিন আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা থাকায় এবং তার কোন উত্তরাধিকারী না থাকায় তার সম্মতিক্রমে তার নাম ছাড়া উক্ত দলিল সম্পাদন হয়। উক্ত দলিলে উল্লেখ আছে, মূল দলিল এর যত শর্ত সম্পূর্ণ বাতিল করা হল। শুধু মাত্র মসজিদ আছে বিধায় বৎসরে আয় হতে মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বাবৎ ১২ বার টাকা দেওয়া হবে। ১নং দলিল গ্রহিতা মোঃ কটু মিয়া যত দিন জীবিত থাকিবেন ততদিন উক্ত দলিলের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকবেন। তার মৃত্যুর পর ২নং দলিল গ্রহিতা উক্ত দলিলের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকবেন। ২নং দলিল গ্রহিতার মৃত্যুর পর তার গর্ভজাত সন্তান ও সন্তানিদের মধ্যে দক্ষ ও উপযুক্ত যোগ্য যে হবে সেই মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থেকে ভোগ দখল করে বৎসরে আয় হতে মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বাবৎ ১২ বার টাকা পরিশোধ করবেন। যদি উপযুক্ত মোতোয়াল্লির কেউ না থাকে তবে মসজিদ কমিটির সভাপতি-সম্পাদক মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন ১২ বার টাকা আদায় করার জন্য দেখাশুনা করবেন। যাহা দলিলের (৫,৬ ও ৭নং পৃষ্টায় উল্লেখ আছে)। ১৯৪৬ সালের ৩৬০৭ নং দলিল ও বিগত ১৯৫১ ইং সনের ২৫ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারীকৃত ৩৫৮২ নং ওয়্কাফ সংশোধন দলিল ওয়্কাফ তালিকাভূক্ত নয় এবং রেজিস্ট্রেশন হয়নি। কটু মিয়া ও তার মেয়ে আবেজা বিবি এবং আবেজা বিবির মেয়ে মনিজা বিবি উরফে মনই এক সাথে বসবাস করেন। মনিজা বিবি আব্দুল জব্বার উরফে মছনু’র সাথে বিবাহ হওয়ার পর এস.এ খতিয়ান নং- ৫৫৫, এস.এ দাগ নং ২১২৮ দাগে চারা বাড়ী রকম ভূমিতে তৈরীকৃত বাড়ীতে এক সাথে বসবাস করতে থাকেন।
বিগত ১৯৫৬-৫৭ সনের সেটেলমেন্ট জরিফে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার মনসুর নিজ মৌজার জে.এল নং- ৬৫, এস.এ খতিয়ান নং- ৩১৯, ৫৫৬, ৫১৮, ৫৫৫, ৩৯১, ৩৯৮, ৪১৫। এস.এ দাগ নং- ১০৮৪, ১০৮৯, ১১৬৫, ১০৮৬, ১১৬৮, ২১২৭, ২১২৮, ২১৪৭, ২১২৫, ২১২৬, ২১২৯, ২০৯৯, ২১০০ নং দাগে চিটা নকশা অনুযায়ী উক্ত কটু মিয়া গংদের নামে রেকর্ড হয়।
মনসুর মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা স্থাপিত হয় ১৯৬৪ ইং সনে। উক্ত মাদ্রাসার মোতোয়াল্লির থাকেন মনসুর গ্রামের আছকর আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ। তার মাধ্যমে ৬৪/৭৬-৭৭নং নামজারী ও জমা খারিজ মোকদ্দমার আদেশ মতে ৯২২ নং নামজারী খতিয়ান সৃজন করেন। আদেশ কপি উঠিয়ে দেখা যায়, হুসেনপুর মৌজার ২৫৯নং খতিয়ানের ১৮৬নং দাগে আট শতক ভূমির আদেশ যাহা মনসুর নিজ মৌজার আদেশ নয়। জাল-জালিয়াতি ও যোগাযোগী মূলে আবেজা বিবি, মজর উদ্দিন ও কটু মিয়ার খতিয়ান ভূক্ত ভূমি অন্তর্ভূক্ত করে উক্ত আদেশ মনসুর নিজ মৌজার আদেশ হিসাবে করানো হয়। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর স্মারক নং ১৩২/৭-৮ মোকদ্দমা বলে উক্ত ৬৪/৭৬-৭৭নং নামজারী আদেশ পূন: বিবেচনাক্রমে বাতিলের আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে উত্তরাধিকারীক্রমে মোতোয়াল্লি আকদ্দছ আলী উক্ত নামজারীর বিপরীতে সহকারী জজ আদালত, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার-এ বিগত ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ তারিখে মোকদ্দমা নং ৩০/২০০৯ইং স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। তদসময়ে উক্ত মাদ্রাসার অধ্যাপক জালাল খান স্বত্ব মামলার বিপরীতে ৫৫৫ খতিয়ানের ২১২৮ দাগের ভূমিতে কমিশন ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও আপিল করলে উচ্চ আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরে হাইকোর্টেও আপিল করিলে মাননীয় হাইকোর্ট জাল-জালিয়াতি বলে নামঞ্জুর করেন এবং মোকদ্দমা নং ৩০/২০০৯ইং স্বত্ব মামলার স্থলে ৮৮/১৭ইং নং স্বত্ব মামলা হওয়ায় নিস্পত্তি করার জন্য আদালতকে নির্দেশ করা হয়। উক্ত ৬৪/৭৬-৭৭নং নামজারী ও জমা খারিজ মোকদ্দমার আদেশ মতে ৯২২নং নামজারী খতিয়ান সৃজন করে উক্ত নামজারীর মাধ্যমে বিগত ২০০৫ সালের ২৫ জুন তারিখে আবেজা বিবি ও মজর উদ্দিনের এস.এ রেকর্ডীয় দাগ খতিয়ানের ভূমি মনসুর মোহাম্মদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও জামে মসজিদ এর পক্ষে সেক্রেটারীর নামে মাঠ পর্যায় ৬০৬, ৭১২ ও ৭১৩নং ডি.পি খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করানো হয়।
২০১৬ সালের ২৭ জুলাই তারিখে ৩১ ধারার আপীলে ১৩৭৫, ১৩৭৬ ও ১৩৭৭ নং খতিয়ানে সাবেক এস.এ খতিয়ানের মালিকগনের অর্থাৎ আবেজা বিবি ও মজর উদ্দিনের নামে খতিয়ান ভূক্ত হয় এবং উক্ত আবেজা বিবি ও মজর উদ্দিনের নামে ১৩৭৫, ১৩৭৬ ও ১৩৭৭ নং চুড়ান্ত খতিয়ান লিপিবদ্ধ হয়। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের উত্তরাধিকারী মোঃ আকদ্দছ আলী গং চুড়ান্ত খতিয়ানের কপি প্রাপ্ত হন। মূল ৮৮/১৭ইং নং স্বত্ব মামলার রায় ও ডিগ্রিতে ৬৪/৭৬-৭৭নং নামজারী ও জমা খারিজ মোকদ্দমার নাম্বার ব্যবহার করে সৃষ্ট ৯২২ নং নামজারী খতিয়ানটি জাল ও অকার্যকর থাকার ঘোষনা করা হয় এবং তর্কিত ৯২২নং নামজারী খতিয়ানটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
মসজিদ-মাদ্রাসার ভূমির দাগ খতিয়ান বিগত ১৯৫৬-৫৭ইং সনের সেটেলমেন্ট জরিপ মতে কুলাউড়ার মনসুর নিজ মৌজা, জে.এল নং-৬৫, এস.এ খতিয়ান নং- ৫৭৬ ও ৫৮১, এস.এ দাগ নং- ২১০৮, ২১০৯, ২১১০, ২১১১, ২১১২ ও ২১১৩ নং দাগের উপর মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপিত আছে। আমাদের মৌরসী ভূমি হতে মসজিদ মাদ্রাসার ভূমি প্রায় ১ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। মসজিদ মাদ্রাসার ভূমির সাথে আমাদের কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা নেই। অতীতেও ছিল না বর্তমানেও নাই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। আমাদের তফসীলকৃত দাগের মধ্যে কোন মসজিদ মাদ্রাসা কখনও ছিল না বর্তমানে নাই। দুঃখের বিষয় একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে একটি মহল অহেতুক সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আমাদের পরিবারবর্গকে বিভিন্ন হয়রানী করছেন।