জুড়ীতে বয়স্ক ভাতার তথ্য নিতে গিয়ে জানলেন তিনি মৃত!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৫:৫৬,অপরাহ্ন ২২ মে ২০২৪
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: জুড়ী উপজেলায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ৪ জনকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার গোয়াল বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম ও ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া যে ৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের বদলে অন্য ৪ জনকে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে এনামুল হক জুলাই ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস ভাতা না পাওয়ায় ভাতার বই নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কার্যালয় থেকে বলা হয় এ কার্ডের মালিক তো মারা গেছেন! তিনি আর ভাতা পাবেননা।
ভুক্তভোগী এনামুল বলেন, এ কার্ডের মালিক আমি স্বয়ং আপনার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে আছি। আমি মারা গেলাম কীভাবে? তখন বলা হয়েছে আপনি ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করুন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২৫ অক্টোবর ২০২৩ সালে গোয়াল বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূমের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বয়স্ক ভাতা ১৩৮জন, বিধবা ২২ জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০ জন সহ ১৭০ জন মৃত ভাতাভোগী পাওয়া যাওয়ায় তাদের স্থলে নতুন সমান সংখ্যক ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তা ছাড়া ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে ৬ নম্বর ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান মো: আব্দুল কাইয়ূম সাক্ষরিত ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যায়নপত্রে এনামুল হক ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
জীবিতদের মৃত দেখিয়ে প্রত্যায়নপত্র দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল কাইয়ূম ও ৬ নম্বর ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন এ জন্য একতরফাভাবে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়কে দায়ী করেন। তারা বলেন, সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে ব্যক্তিদের নামে মৃত্যু সনদ দেওয়ার জন্য আমাদের বলা হলে আমরা তা দেই। পরে জানতে পারলাম উনারা জীবিত। তখন নতুন করে প্রত্যায়নপত্র দিয়ে তাদের ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করা হয়।ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন ছাড়া তাদের মৃত্যুর তারিখ কোথায় পেলেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সকল ভাতাভোগীদের হালনাগাদ তথ্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়।চেয়ারম্যান–মেম্বাররা যাচাই–বাছাই করে মৃত্যুসনদ/প্রত্যায়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেই। অনেক সময় কিছু মেম্বার অবৈধ লেনদেন করে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বাদ দিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করেন। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোনো দায় নেই। গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে যাদের মৃত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদের পুনরায় ভাতার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসি কান্ত হাজং বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জুড়ীর ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।