“জাগিয়ে দেরে চমক্ মেরে’;আছে যারা অর্দ্ধচেতন” অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৩:২৮,অপরাহ্ন ১৪ আগস্ট ২০২০
রিয়েল টাইমস ৭১ :: মানুষের অসিম শক্তি ও সম্ভাবনাকে সবসময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে রাখে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস।অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সত্বেও পারিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে প্রচলিত ধারনার শৃঙ্খলে সে ক্রমান্বয়ে বন্দি হয়ে পড়ে। পরিবেশ যা তাকে ভাবতে শেখায় সে তা-ই ভাবে।যে হতে পারতো যুগ শ্রস্টা বিজ্ঞানী,হতে পারতো শতাব্দির অভিযাত্রী,অমর কথাশিল্পী,হতে পারতো মহান নেতা বা বিপ্লবী,হতে পারতো আত্বজয়ী বীর বা ধর্মবেত্তা,সেই মানব শিশুই ভ্রান্ত ধারনায় বন্দি হয়ে পরিনত হয় কর্মবিমুখ হতাশ ব্যর্থ কাপুরুষ। এ ব্যর্থতার কারণ মেধা বা সামর্থের অভাব নয়,এ ব্যর্থতার কারণ মনোজাগতিক শিকল।সেই মনোজাগতিক শিকল হতে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে যারাই মুক্ত হতে পেরেছে তাদের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই মানবিকতার উত্থান।
১১ই আগষ্ট। এই দিনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এরকমই একজন মুক্তবুদ্ধির বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর হত্যা দিবস। ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মেদিনীপুর জেলায় যার জন্ম।বাবা ত্রৈলক্যানাথ।মা লক্ষী দেবী।ক্ষুদিরাম মেদিনীপুর হ্যামিলটন কলেজিয়েট স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন।দেশ মাতৃকাকে ব্রিটিশদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি ১৯০৩ সালে গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন।
মেদিনীপুর মারাঠা কেল্লার প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে ক্ষুদিরাম বই হাতে বলছেন, ‘আসুন পড়ুন।দেশের দুর্দশার খবর জানুন।অত্যাচারী রাজশক্তির নির্মমতার নজির এই বই আপনাদের জন্য।হঠাৎ’ অ্যাই ক্যায়া করতা হায়।চুপ বই।’ একজন হাবিলদার ক্ষুদিরামের হাত চেঁপে ধরলো। শক্তি ও বয়সে তাঁর চেয়ে অনেক বেশী। তবুও ক্ষুদিরামের কাছে’ কুছ পরোয়া নেহি’।হাবিলদারের মুখের মধ্যে এক বক্সিং মেরে দিলেন সমুস্ত শক্তি দিয়ে!তৎক্ষনাৎ নাক ফেঠে রক্ত বেরুলো! সত্যেন বসু ঠিক ঐ সময়ে এসে হাজির হলেন।দেখলেন বিষয়টি।শান্তনা দিলেন হাবিলদারকে।ক্ষুদিরাম মুহুর্তের মধ্যে হাওয়া।কয়েকদিন আত্বীয়ের বাড়ীতে আত্বগোপনে রইলেন।তাতে কী আর একজন দেশপ্রেমিক শান্তিপায়? দেশজোড়া বিপ্লবের ঢেউ। হাজার হাজার ছেলে- মেয়ে জড়িয়ে আছে দেশ মাতৃকার কাজে।পুলিশের ভয়ে আর কতদিন পালিয়ে থাকা যায়।মনস্হির করলেন পুলিশের কাছে ধরা দিবেন!তাই আলীগঞ্জের তাঁতশালায় এসে ধরা দিলেন!পুলিশ অ্যাসল্ড ও নিষিদ্ধ বই বিলির অপরাধে ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হলো।বাংলা সহ সারা ভারতবর্ষ এই প্রথম ক্ষুদিরামকে চিনলো।দাউ-দাউ করে জ্বলে উঠলো আন্দোলনের দাবানল।
ক্ষুদিরাম বসু হয়ে উঠলো সারা ভারতবর্ষের একজন বিপ্লবীর নাম।যে নামটি শুনলেই চেতনার আয়নায় ভেসে উঠে একটি ফাঁসির দৃশ্য।যিনি ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন।জীবন বাঁচানোর লোভ দেখিয়েও যাকে মিথ্যা বলানো যায়নি।১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল অত্যাচারী কিংসফোর্টোর গাড়ী লক্ষ্য করে তিনি বোমা নিক্ষেপ করেন।এজন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯০৮ সালের ১১ আগষ্ট তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।চলে গেলেন বাংলার বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু কিন্তু ‘ জাগিয়ে দিলেন চমক্ মেরে;আছে যারা অর্দ্ধ চেতন’।