বড়লেখার বোবারথলে পানি সংকট : পাহাড়ের চুইয়ে পড়া পানিতে নির্ভরশীল ১০ হাজার মানুষ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৮:৩২,অপরাহ্ন ২০ নভেম্বর ২০১৯
আব্দুর রব, বড়লেখা :
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী বৃহত্তর বোবারথল গ্রামের ১০ হাজার মানুষ সারা বছরই পাহাড়ের চুয়া পানি ও ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল থাকেন। তাদের কাছে বিশুদ্ধ পানি বলতেই এ পানিকে বুঝায়। জীবানু যুক্ত পানি পানের কারণে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদের শিক্ষার্থী ছাড়াও গ্রামবাসীর অনেকেই পানিবাহিত নানা অসুখ-বিসুখে ভোগছেন। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের পানি ছোঁয়া বন্ধ হলে এবং নালা-ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় গুসলের পানিও না থাকায় গ্রামবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোয়ান। ভুক্তভোগীদের দাবী ১০-১৫ পরিবার প্রতি সরকারীভাবে রিং কুয়া স্থাপন ও নালা-ছড়া খনন করে পানির রিজার্ভার তৈরী করলে তাদের দীর্ঘদিনের পানীয় জলের এ সমস্যা লাঘব হবে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির সীমান্তবর্তী দক্ষিণ গান্ধাই, পশ্চিম গান্ধাই, মাঝ-গান্ধাই, ষাটঘরি, উত্তর ষাটঘরী, শান্তিনগর, ইসলাম নগর, পেকুছড়া, করইছড়া মহল্লা নিয়ে বৃহত্তর রোবারথল গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে ২০-২৫ কি.মিটার দুরবর্তী দুর্গম পাহাড়ি টিলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে ৩টি প্রাইমারী স্কুল, ২টি মাদ্রাসা, ১টি মিশনারী স্কুল, ১টি হাইস্কুল ও ২০টি জামে মসজিদ রয়েছে। বোবারথল এলাকার মাটি শিলা পাথর মিশ্রিত হওয়ায় সেখানে গভীর ও অগভীর কোন ধরণেরই নলকুপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে ওই এলাকার লোকজনকে সারা বছরই ছড়া, নালা ও পাহাড়ের দুই টিলার মধ্যবর্তী স্থানের ছোঁয়া পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। একটি টিলার ছোঁয়া পানির ওপর ১৫-২০ পরিবারের লোকজন নির্ভরশীল। বিশেষ পদ্ধতিতে পানি সংগ্রহ করতে তাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় নোংরা জীবানু যুক্ত পানি পানের ফলে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণকে পানি বাহিত নানা অসুখ-বিসুখে ভুগতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের ছোঁয়া পানি বন্ধ হলে এবং ছড়া-নালার পানি শুকিয়ে গেলে লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী আব্দুস সহিদ খান, জসিম উদ্দিন, সাইদ আহমদ, আব্দুল বাছিত, আব্দুস সালাম, ফারুক উদ্দিন প্রমুখ জানান, বোবারথল এলাকার লোকজন বিশুদ্ধ পানি বলতে পাহাড়ের ছোঁয়া পানিকেই বুঝে থাকেন। এখানে নেই কোন নলকুপ। বছরের পর বছর ধরে নালা, ছড়া ও টিলার ছোঁয়ে পড়া পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। তারা পান, রান্নাবান্না, গোসলসহ সব কাজেই এ পানি ব্যবহার করছেন। শুষ্ক মৌসুমে পানি ছোঁয়া বন্ধ হলে ছড়া শুকিয়ে গেলে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। তখন গভীর গর্ত করে রাখেন। সব গর্তের পানি ব্যবহার উপযোগী হয়না। যে গর্তের পানি কিছুটা স্বচ্ছ হয় দুরের হলেও সেখানকার জমা পানি তারা সংগ্রহ করে ব্যবহার করেন। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে এলাকার লোকজনসহ স্কুল মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীরা নানা অসুখে আক্রান্ত হন। ভুক্তভোগী এলাকাবসীর দাবী ১৫-২০ পরিবার প্রতি সরকারীভাবে রিং কুয়া স্থাপন ও গান্ধাই ছড়া খনন করে রির্জাভার তৈরী করলে পানীয় জলের সমস্যা লাঘব হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, বোবারথল এলাকার মাটিতে পাথর থাকায় সেখানে কোন ধরণের নলকুপ করা যায় না। বিশাল জনগোষ্ঠী অনন্তকাল থেকে পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যায় ভোগছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় সরকারীভাবে রিং কুয়া স্থাপন ও গান্ধাই ছড়া খনন করে পানির রিজার্ভার তৈরীর প্রস্তাব করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারও সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।