মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বিষপ্রয়োগে মাছ নিধন : ৩দিন ধরে মাছ পচা দুর্গন্ধে নাকাল পর্যটকরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৮:৪৮,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৯
জানা গেছে, পাথারিয়া পাহাড়ের ওপরের বিভিন্ন ছড়ার ছুয়া পানি একত্রিত হয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও নিচে গভীর জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ জলাশয়ের পানি মাধবছড়া ছড়া (ছোট নদী) দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে হাকালুকি হাওরে পতিত হয়েছে। জলপ্রপাতের নিচের জলাশয় ও ছড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর নিরাপদ আবাস্থল। শনিবার সকালে হঠাৎ পর্যটন পুলিশ, স্থানীয় আদিবাসী খাসিয়া ও ইকোপার্কের কর্মীরা জলপ্রপাতের পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ব্যাঙ, কুচিয়া, কাকড়াসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে থাকতে দেখেন। পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে তারা মরা মাছগুলো উঠিয়ে অন্যত্র ফেলে দেন। ওই দিন থেকেই দুর্গন্ধের কারণে মাধবকুণ্ডে আগত পর্যটকরা মুল স্পটে না গিয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোমবার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কুণ্ডের ও ছড়ার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মরা মাছ, ব্যাঙ ভেসে থাকতে দেখা গেছে। সচ্ছ পানির নিচে মরা মাছ, কাকড়া, ব্যাঙসহ নানা জলজ প্রাণী পড়ে থাকতে দেখা যায়। ইকোপার্কের টিকেট কালেক্টর শামীর আহমদ, মাধবকুণ্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন জানান, শনিবার ভোর থেকেই তারা বামাস, সউল, সরপুটি, পাহাড়ি চিংড়ি, বাইং, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মরা-পচা মাছ ভাসানো অবস্থায় দেখতে পান। পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে পর্যটন পুলিশ তাদেরকে দিয়ে মরা মাছসেগুলো তুলে অন্যত্র ফেলে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও পানির ও বাতাসের দুর্গন্ধ সারানো যাচ্ছে না। মাধবকুণ্ডের নিচের পানি অত্যন্ত সচ্ছ থাকায় পানির দেড়/দুই ফুট নিচে অবস্থানকারী ছোটবড় মাছ ও জলজ প্রাণী দেখা যেত। এতে পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতো। পানিতে নেমে সাতার কাটতো। কিন্তু মাছসহ জলজ প্রাণী নিধন করায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ থেকে পর্যটকরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকবে। তাদের ধারণা মাছ শিকারের জন্য কোন কুচক্রী মহল ৩-৪ দিন পূর্বে হয়ত পানিতে বিষ প্রয়োগ করায় এমনটি হচ্ছে। তারা কয়েকটি মরা-অর্ধপচা বামাস মাছ উদ্ধার করেছেন যাদের বয়স ১৫-২০ বছর হবে বলেই তাদের ধারণা। দুর্বৃত্তদের কারণে মাধবকুণ্ডের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। অমানবিক একাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের ইন্সপেক্টর আবু ফয়সল মো. আতিক জানান, মরা ও পচা মাছ ভেসে থাকতে দেখেই তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে জানিয়েছেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি তাকে কেউ অবগত করেনি। এইমাত্র জানলেন, খোঁজ নিয়ে এব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা মৎস্য কর্তকর্তা মো. সুলতান মাহবুব জানান, সোমবার বিকেলে তিনি ঘটনাস্থলে একজন স্টাফ পাঠিয়ে পানি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন, কেমিকেল জাতীয় নয়, লতা (একধরণের বিষ লত) জাতীয় বিষপ্রয়োগে মাছ ও জলজপ্রাণী মারা গেছে। পানির স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে মঙ্গলবার সেখানে ঔষধ প্রয়োগ করবেন। এতে পানি ও বাতাসের দুর্গন্ধ দুর হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।