কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৯:৩২,অপরাহ্ন ২১ অক্টোবর ২০১৯
আব্দুর রব, বড়লেখা: কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথের পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লো আরও ৬ মাস। রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চললেও বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর সংস্কার কাজে গতি এসেছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সুত্র।
২০১৮ সালের মে মাসে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ অবস্থায় নতুন করে প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও ছয়মাস। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ হবে।
সরেজমিনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শণকালে দেখা গেছে, পুরনো রেল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে পুরনো সেতু ও কালভার্ট। পুরানো স্টেশন ঘর ভাঙার কাজ চলছে। কাঠালতলী, শাহবাজপুর স্টেশন এলাকা ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকার কিছু স্থানে রেলপথের মাটি সরিয়ে সেখানে নতুন করে মাটি ফেলে উঁচু করার কাজ চলছে। দক্ষিণভাগ, শাহবাজপুর ও মুড়াউলে নতুন স্টেশন ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পাথর, রেলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে মজুদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাজে আর কোনো অগ্রগতি খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়েছিলো। রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতো। স্বাধীনতা পরবর্তী কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী একমাত্র ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে ‘লাতুর ট্রেন’ নামে পরিচিত ছিল।
রেললাইনটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এলাকা এবং বিয়ানীবাজারের একাংশের লোকজন দুর্ভোগের শিকার হন। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করেন সর্বস্তরের জনসাধারণ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেবে। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই ডুয়েলগেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
ভারতের দিল্লির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ পায়। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের ‘বালাজি রেল রোড সিস্টেমস’। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ৫টি রেলস্টেশনের কাজ হবে। স্টেশনগুলো হলো জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। পুরো রেলপথটি ডুয়েল গেজের হবে।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন জানান, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ আরও ৬ মাস বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ আগাতে পারেনি। এখন কাজ আগাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেক রেল ও পাথর নিয়ে এসেছে। দক্ষিণভাগ, শাহবাজপুর ও মুড়াউল স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
বড়লেখা থেকে শাহবাজপুরের দিকে আগের মাটি কেটে নতুনভাবে মাটি দিচ্ছে। উপরের ১ মিটার মাটি কেটে তুলে ফেলা হবে। তারপর লেয়ার বাই লেয়ার কমপেকশন করে নতুন করে মাটি দেবে। ডুয়েল গেজের জন্য দু’পাশে মাটি বাড়বে।