ভুয়া লন্ডনি কন্যা রিতাকে নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৮:০৫,অপরাহ্ন ১৬ অক্টোবর ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: ফেসবুকে দুজনার পরিচয়। এরপর ধীরে ধীরে পরিণয়, অতঃপর বিয়ে। একবার নয়, বারংবার। তবে এসব বিয়েতে বর পরিবর্তন হলেও কনে একজনই। কনের পরিচয় তিনি লন্ডনি কন্যা। এই পরিচয়েই বিভিন্ন যুবকের সাথে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলেন মৌলভীবাজার সদরের সোনাপুর গ্রামের তেরা মিয়ার মেয়ে রিমা আক্তার রিতা। সম্পর্কের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে বিয়ের জন্য বেঁকে বসেন রিতা।
লন্ডনি কন্যা রিতার প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসেছেন একাধিক যুবক। বিয়ের আগে পরে স্বামীকে লন্ডন নেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। মোহরানাও দেওয়া হয় বড় অঙ্কের। বিয়ের পর মাস দুয়েক ভালোই কাটে। কিন্তু এরপরই ফাঁস হয়ে যায় লন্ডনি কন্যার গোমর। আসলে রিমা আক্তার রিতা কোনো লন্ডনি কন্যা নন। কিন্তু নিজেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিক পরিচয় দিয়ে লুটে নেন স্বামীর টাকা পয়সা। এরপর তালাক। সবশেষে মোহরানার টাকাসহ নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন রিতা। এরপর নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, নতুন প্রেমিক, নতুন স্বামী, নতুন করে প্রতারণা। অনুসন্ধানে জানা গেছে এটাই রিতার প্রধান পেশা।
ভুয়া লন্ডনি কন্যা সেজে ফেসবুকের মাধ্যমে নতুন প্রতারনার ফাঁদ পেতেছেন রিমা আক্তার রিতা। নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে লন্ডনি কন্যা পরিচয় দিয়ে স্ট্যাটাস বিভিন্ন যুবকদের আর্কষিত করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে ধনাঢ্য পরিবারের যুবকদের সাথে প্রেমে সর্ম্পক গড়ে তুলে প্রতারণা করছেন রিতা। হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। একের পর এক বিয়ে খেলায় মেতে উঠেছেন। রিমা আক্তার রিতার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০টি বিয়ের অভিযোগ থাকলেও ৩টি বিয়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১ম ও ২য় স্বামীর বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা করেছেন রিতা। সর্বশেষ লন্ডনি কন্যা সেজে বিয়ে করে ২ মাসের অন্তঃসত্বা অবস্থায় আত্মগোপন করেছেন তিনি।
মামলা ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা সদরের সোনাপুর গ্রামের তেরা মিয়ার মেয়ে রিমা আক্তার রিতা লন্ডনি কন্যা সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন যুবকদের সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলেন।
কিছুদিন আগে রিমা আক্তার রিতার সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় নবীগঞ্জের মিঠাপুর গ্রামের যুবক মৌলভীবাজার শহরের ব্যবসায়ী ফয়সর আহমদের। মোবাইল ফোন ও যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের পর ফেসবুকে লন্ডনি কন্যা রিমা আক্তার রিতার ফোনে আলাপ ও সরাসরি দেখা শুরু হয়। একসময় ফয়সর ও রিতা একে অপরের প্রেমে পড়েন।
এক পর্যায়ে এ বিষয়টি লন্ডনি কন্যার আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে জানাজানি হয়। পরে দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে লন্ডনি কন্যা পরিচয়দারী রিমা আক্তার রিতার মা পিয়ারা বেগম, মামা ফারুক মিয়া ও জাবেদ মিয়ার মাধ্যমে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়। বিয়ের পূর্বেই লন্ডনি কন্যার আত্মীয়- স্বজনরা প্রেমিক ফয়সর আহমদকে লন্ডন নেওয়ার খরচ বাবৎ ১৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। প্রেমিক ফয়সর বিয়ের আগেই নগদ ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ৯ তারিখ সিলেট নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ১লক্ষ টাকা দেনমহর নির্ধারণ করে ফয়সর আহমদ ও রিমা আক্তার রিতার বিয়ে হয়।
এরপর শশুর বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে নব-দম্পত্তির হানিমুনের করেন। কিছুদিন পর হঠাৎ করে লন্ডনি কন্যা রিতা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্বামী মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের একটি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানের পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ২মাসের অন্তসত্বা ধরা পড়েন রিতা।
এতে স্বামী ফয়সর আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। এর কিছুদিন পর চলতি বছরের ১৪ই মার্চ ফয়সর তার স্ত্রীকে মোবাইলে বার বার কল দিলে সে মোবাইল রিসিভ না করলে ফয়সর তার শশুর বাড়ি মৌলভীবাজার সোনাপুরে যান। সেখানে তার স্ত্রীকে না পেয়ে তার শাশুড়িকে রিমার কথা জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, রিমা তো বাড়িতে নেই। আমরা তাকে খুজে পাচ্ছিনা। এ কথা শুনে স্বামী হতাশ হয়ে পড়েন।
পরে ফয়সর আহমদ এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, রিমা আক্তার রিতা কোন লন্ডনি কন্যা নন। তিনি লন্ডনি কন্যা সেজে বিভিন্ন যুবকদের সাথে প্রতারনা করছেন। এ খবরে স্বামী ফয়ছর আহমদ আরো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আবারও শ^শুরবাড়ি যান তিনি। সেখানে গিয়ে রিমার আত্মীয় স্বজনদের সাথে লন্ডন নেওয়ার বাবৎ যে, ৫ লক্ষ টাকা সে দিয়েছিল তা ফেরত চাইলে তারা ফয়সর আহমদকে শান্তনা দিয়ে বলেন, বিষয়গুলো কাউকে না জানানোর জন্য বলেন এবং আগষ্ট মাসের ৩১ তারিখ টাকা দিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। এতে তিনি নিশ্চুপ সেখান থেকে চলে আসেন। তাদের কথা অনুযায়ী তারিখ মতো টাকা না পাওয়ায় জন্য আবারও ফয়সর আহমদ ঐ এলাকার জনপ্রতিনিধি সহ মুরব্বিয়ানদের নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে নগদ ৫লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে। আত্বীয় স্বজন মারমুখি উঠে। এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভুয়া লন্ডনি কন্যার আত্মীয় স্বজনরা টাকা আত্মসাতের জন্য নানা পায়তারা শুরু করে। এক পর্যায়ে ভুয়া লন্ডনি কন্যাকে আড়াল করে একের পর এক মিথ্যা মামলা করে। পরে ফয়সর আহমদ জানতে পারেন এর আগেও রিমার বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামীর উপরও রিমার মামলা আছে।
পরে ফয়সর আহমদ স্ত্রী ও তার আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি প্রতারনা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার খবর পেয়ে আসামীরা বাদীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য।
নিজের জিবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ফয়ছর মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন। ডায়রি নং ২৫৩।
ভুয়া লান্ডনী কন্যা রিমা আক্তার রিতা মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার জায়ফর নগর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে পুত্র আরিফ রহমানকে বিয়ে করেন। আরিফের সাথে দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে প্রেমের সর্ম্পক স্থাপন করেন রিমা আক্তার রিতা।
গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখ মৌলভীবাজার নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ৫লক্ষ টাকার দেন মহরে রিমা ও আরিফ বিবাহ হয়। বিয়ের প্রায় সাড়ে ৩ মাসের মাথায় রিমা আক্তার রিতা বাদী হয়ে আরিফ রহমানের উপর যৌতুক আইনের ২ লক্ষ টাকার যৌতুক দাবীর জন্য বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত (সদর) মৌলভীবাজারে একটি মামলা দায়ের করেন।