মানুষ হত্যার পরিণতি ভয়াবহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৪:৫৯,অপরাহ্ন ১০ অক্টোবর ২০১৯
যুবায়ের আহমাদ॥
মানুষকে সম্মানিত করেছেন আল্লাহতায়ালা। জীবনভর সংগ্রাম করে বিদায় হজের ভাষণে বিশ্বময় সেই মর্যাদার ঘোষণা করেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিন, এই পবিত্র মাস (জিলহজ) পবিত্র এই শহর (মক্কা) যেমন যেমন পবিত্র ও সম্মানিত তেমনি এগুলোও (অন্যের জানমাল, সম্মান) সম্মানিত ও পবিত্র। ’ বুখারি।
এমনকি একজন ইমানদারের মর্যাদা পবিত্র কাবার চেয়েও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি দেখেছি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরিফ তাওয়াফ করছেন আর কাবাকে সম্বোধন করে বলছেন, ‘(হে কাবা!) তোমার পবিত্রতা, সুগন্ধি, মর্যাদা ও সম্মান কতই না বেশি! সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, একজন মুমিনের সম্মান আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও বেশি। ’ তিরমিজি।
আজ সেই সম্মানিত মানুষকে ঠুনকো বা ভিত্তিহীন অভিযোগে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করছে আরেক দল মানুষ। ইসলামে একজন মুমিনকে হত্যা করা তো দূরের কথা তাকে গালিগালাজ করাও নিষিদ্ধ। কোনো মুমিনকে হত্যা করা সরাসরি কুফুরি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি আর তাকে হত্যা করা হলো কুফুরি। ’ বুখারি, মুসলিম।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘গোষ্ঠীপ্রীতির কারণে, দলপ্রীতির কারণে যে কোনো মানুষকে হত্যা করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা বড় গুনাহগুলোর একটি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। ’ বুখারি। এমনকি গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও একজন মুসলমানকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে বড় অন্যায়।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘৃণিত কাজ হলো একজন মুসলমানকে হত্যা করা। ’ তিরমিজি। আর মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কোনো মানুষকে হত্যাই ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকেই হত্যা করল। ’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৩২।
কাউকে হত্যা করা এতই জঘন্য অন্যায় যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রথমে হত্যার বিচার করবেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার বিচার হবে তা হলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত। ’ বুখারি। নিহত ব্যক্তি ঘাতককে মাথা ধরে নিয়ে আল্লাহর আরশের সামনে হাজির করবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে, কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি ঘাতকের মাথা ধরে টেনে টেনে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। তাকে হত্যার সময় যেভাবে রক্ত ঝরছিল সেভাবে রক্ত ঝরতে থাকবে। ঘাতককে ধরে আল্লাহর আরশের সামনে নিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! একে জিজ্ঞাসা করুন কেন আমাকে হত্যা করেছিল। ’ মুসনাদে আহমাদ। কিন্তু কী হবে সেই বিচার? কোরআনুল কারিম ওই ঘাতকদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করল, তার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার প্রতি আল্লাহর গজব ও অভিশাপ। তিনি তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন। ’ সূরা নিসা, আয়াত ৯৩।
লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।
সৌজন্য :বিডি প্রতিদিন।