বড়লেখায় কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে : হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৭:১৫,অপরাহ্ন ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়িসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
আব্দুর রব, বড়লেখা : বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও উপজেলার আখালিমোরা গ্রামের অকিল বিশ্বাসের মেয়ে মাধবী রানী বিশ্বাস (১৮)। কলেজের চলিত বছরের স্বরস্বতি পুজোর অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে কলেজ গেট থেকে জোরপুর্বক তাকে তুলে নেয় অরকুমার নামে জুড়ী এলাকার এক যুবক। এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের প্রায় সাড়ে ৫ মাসের মাথায় স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজায়। পিতৃপক্ষকে মৃত্যুর খবর না দিয়েই মরদেহ দাহ করে। অবশেষে ঘটনার ৬ দিন পর নিহত কলেজছাত্রীর বাবা অকিল বিশ্বাস মেয়ের স্বামী হরকুমার বিশ্বাস, শ্বশুড় করুণা বিশ্বাস, শ্বাশুড়ি দীপ্তি রানী বিশ্বাস এবং দেবর-ননদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে পিটিশন মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এ মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জুড়ী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, কলেজছাত্রী মাধবী রানী বিশ্বাসকে কলেজে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই অরকুমার বিশ্বাস উত্ত্যক্ত করতো। ৭ মার্চ কলেজের স্বরস্বতি পুজো শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে কলেজের গেটের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল মাধবী। এসময় ওই অরকুমার বিশ্বাস তাকে জোরপুর্বক তুলে নিয়ে যায়। বাবা-মা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। একসময় জানতে পারেন জুড়ী উপজেলার সায়পুর গ্রামের করুণা বিশ্বাসের ছেলে অরকুমার বিশ্বাস (২৫) মাধবীকে নিয়ে বাহাদুরপুর এলাকায় তার মামার বাড়িতে অবস্থান করছে। তুলে নেয়ার ২৬ দিন পর অরকুমার বিশ্বাস কলেজছাত্রী মাধবীকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। কিন্তু তার বাবা-মা এ বিয়ে মেনে না নেয়ায় নিজ বাড়িতে তুলছিল না। পরে দুই পরিবারের এলাকার মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।
মাধবীর বাবা অকিল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, সামাজিক বিয়ের পর মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। বিয়ের ৫ মাস ৮ দিনের মধ্যে একটি বারের জন্যও মাধবীকে বাবার বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। গত ১৮ আগস্ট রাতে স্বামী অরকুমারসহ তার পরিবারের সদস্যরা মাধবীকে মারধর করে। একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর তারা আত্মহত্যার নাটক সাজায়। মাধবী আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচারণা করলেও বাবার বাড়িতে কোন খবর দেয়া হয়নি। প্রতিবেশি মারফত খবর পেয়ে পরদিন সকালে আমি ও আমার স্ত্রী জুড়ী থানায় গেলে পুলিশ আমাদেরকে মেয়ের লাশ দেখতে না দিয়েই ময়না তদন্তে পাঠিয়ে দেয়। মেয়ের গলায় দায়ের কুপ ও গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি জেনে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে আসার পরও স্বামীর বাড়ির লোকজন আমাদেরকে লাশ দেখতে এবং কাস্ট অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেয়নি। অবশেষে গত ২৫ আগস্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে স্বামী অরকুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। তিনি মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার চেয়েছেন।
জুড়ী থানার ওসি মো. জাহাঙ্গির হোসেন সরদার জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মাধবী রানীর অপমৃত্যু মামলার প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আদালতে প্রেরণ করেছেন।