বড়লেখা সীমান্তে ফের শুরু হয়েছে ভারতীয় মহিষ পাচার : বিএসএফের গুলিতে হতাহতের আশংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫২:৫৩,অপরাহ্ন ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
আব্দুর রব, বড়লেখা : মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে চোরকারবারীরা ফের শুরু করেছে ভারতীয় মহিষ পাচার। গত ২৩ আগস্ট চোরাকারবারীদের মহিষ আনতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যায় নিরীহ বাংলাদেশী যুবক আব্দুর রূপ। এরপর কিছুদিন চোরাচালান বন্ধ থাকলেও ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সীমান্ত দিয়ে পুনরায় অবৈধ মহিষের চালান আসছে। এতে বিজিবি-বিএসএফের সম্পর্কের অবনতিসহ বিএসএফের গুলিতে সীমান্তের নিরীহ মানুষজন হতাহতের আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার কয়েকটি থানার সাথে বড়লেখা উপজেলার অন্তত ৩০ কি. মিটার সীমান্ত রয়েছে। এ সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকাই অত্যন্ত দুর্গম ও পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা। এ সুযোগে প্রভাবশালী চোরাকারবারী সিন্ডিকেট ভারতীয় গরু-মহিষ, মদ, মোটরসাইকেল, সিগারেট, নাসির উদ্দিন বিড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য চোরাচালানের ট্রানজিটে রোডে পরিণত করে এ সীমান্তের কয়েকটি স্পটকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ সদস্যের প্রভাবশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট সীমান্তের দরিদ্র জনসাধারণকে বড় অঙ্কের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পাঠিয়ে দেয় সীমান্তের ওপারে চোরাই মাল (মহিষ ও গরু) আনতে। গত ২৩ আগস্ট রাতে বড়লেখা উপজেলার সদর ইউপির বিওসি কেছরিগুল (উত্তর) গ্রামের সাজ্জাদ আলীর ছেলে ৩ সন্তানের জনক আব্দুর রূপ এক সিন্ডিকেট সদস্যের মহিষ আনতে গিয়ে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রমকালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। দুইদিন পর একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিএসএফ নিহত আব্দুর রূপের লাশ হস্তান্তর করে। এর আগে আগস্ট মাসেই ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিএসএফের গুলিতে উপজেলার বোবারথল ও ষাটঘরি এলাকার অন্তত ২০-২৫ ব্যক্তি আহত হন। আব্দুর রূপ মারা যাওয়ার পর মাত্র ১৫-১৬ দিন এ সীমন্তে মহিষ চোরাচালান বন্ধ থাকলেও গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় তা শুরু হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গেলে সীমান্ত সুত্র জানায়, চোরাকারবারীরা মহিষ প্রতি ১ হাজার টাকা দিয়ে সীমান্তের নিরীহ মানুষকে ওপারে পাঠিয়ে দিত। বিএসএফের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত ও ২০-২৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কে লোকজন এ কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু স¤প্রতি স্মাগলারদের বাড়তি অর্থের লোভে কিছু দরিদ্র ব্যক্তি অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় বোবারথলের পেকুছড়া, কুদালি বাড়ি ও ষাটঘরি সীমান্ত দিয়ে মহিষের চালান আসতে শুরু করেছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের আশংকা পুনরায় মহিষ পাচার শুরু হওয়ায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ও সীমান্তে বিএসএফের গুলাগুলির ঘটনা ঘটতে পারে।
বড়লেখা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, বিএসএফের গুলিতে তার ইউনিয়নের এক ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনার পর তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনকে পরামর্র্শ দিয়েছেন কেউ যেন চোরাচালানীর কাজে সহায়তা না করে। ভারতীয় চোরাই মহিষ দেখলেই যেন আটক করে বিজিবি ও তাকে খবর দেয়া হয়। স¤প্রতি মহিষ পাচার শরু হওয়ার বিষয়টি তার কানেও এসেছে বলে স্বীকার করেন।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফয়জুর রহমান এসপিপি, পিএসসি জানান, বড়লেখা সীমান্ত এলাকার চোরাচালান প্রতিরোধকল্পে বিজিবি সদস্যগণ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছেন। বিএসএফের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর স্থানীয় জনসাধারণকে সীমান্ত অতিক্রম না করতে, কোন ধরণের চোরাচালানীর সাথে সম্পৃক্ত না হতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীমান্তবাসী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের নিয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন। গবাধিপশু, মাদকসহ সবধরণের চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি বদ্ধ পরিকর। সম্প্রতি ভারতীয় মহিষ অবৈধভাবে বড়লেখায় প্রবেশের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।