বড়লেখায় গাড়ির ব্যাটারী চোরচক্রের মূল ২ হোতা কারাগারে
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৭:১৯,অপরাহ্ন ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এবার বুলেট রাজার সহযোগি মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এছাড়া তাদের দুজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
থানা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ট্রাকের ব্যাটারি চুরির ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার গ্রামতলা এলাকার ছাদিক আহমদ বাদি হয়ে ছাইদ আহমদ ওরফে বুলেট রাজাকে প্রধান আসামি ও ৬-৭ জনের নামোল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেন (মামলা নম্বর ০১)। মামলার এজাহারে ছাদিক আহমদ বলেন, তার দুটি ট্রাক রয়েছে। ট্রাক দুটি জনৈক সুনাম উদ্দিন ও মামুন আহমদ চালান।
প্রতিদিনের মতো গত ২৯ আগস্ট ট্রাক দুটি সারাদিন চালানো হয়। এদিন রাত আটটায় ট্রাক দুটি বড়লেখা পৌরশহরের উত্তরবাজার ট্রাকস্ট্যান্ডে রেখে চালকরা বাড়ি চলে যায়। পরদিন ভোরে ট্রাক চালক মামুন আহমদ গাড়ি নিতে এসে দেখেন ট্রাকের ব্যাটারি নেই। চালক মামুন বিষয়টি তাকে ফোনে জানান।
খবর পেয়ে তিনি এসে দেখেন, দুটি ট্রাকের ৩টি ব্যাটারি ও ১টি জ্যাক অজ্ঞাত চোরেরা নিয়ে গেছে। পরে তিনি জানতে পারেন একইদিন (২৯ আগস্ট) রাতে মামলার ১ নম্বর সাক্ষি আব্দুল হামিদের ব্যাটারি থেকে ১টি ব্যাটারি, ২ নম্বর সাক্ষি জব্বার মিয়ার ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে ২টি ব্যাটারি, ৩ নম্বর সাক্ষি মমিন মিয়ার ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে ২টি ব্যাটারি ও ৪ নম্বর সাক্ষি ফারুক মিয়ার ট্রাক থেকে ১টি ব্যাটারি চুরি হয়।
পরে ছাদিক আহমদ ও মামলার সাক্ষিরা জানতে পারেন, গত ৩০ আগস্ট রাত দশটায় এলাকার চিহ্নিত চোর ছাইদ আহমদ ওরফে বুলেট রাজা ও তার সহযোগিরা চান্দগ্রাম রোডের পাশে রাখা জনৈক ময়না মিয়ার বাস থেকে ব্যাটারি চুরির চেষ্টাকালে এলাকার লোকজন ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ও মামলার সাক্ষিরা গত ৩১ আগস্ট গ্রামতলা বাজার থেকে তাকে আটক করেন। পরে সে আমার ও সাক্ষিদের গাড়ি থেকে ব্যাটারি চুরির কথা স্বীকার করে। এসময় উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে এবং তার বাড়ি থেকে আমার গাড়ি থেকে চুরি করা তিনটি ব্যাটারির মধ্যে দুটি উদ্ধার করে। পরে বুলেট রাজার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগি ইমদাদুর রহমান রাহাতকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করে পুলিশ।
এদিন (১ সেপ্টেম্বর) রাতে অটোরিকশা থেকে ব্যাটারি চুরির ঘটনায় আরো একটি মামলা করেন উপজেলার জফরপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক ইসলাম উদ্দিন (মামলা নম্বর ২)। মামলায় ছাইদ আহমদ ওরফে বুলেট রাজাকে ১ নম্বর ও ইমদাদুর রহমান রাহাতকে ২ নম্বর আসামি করে আরও ৬-৭ জন নামোল্লেখ করে থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে তিনি বলেন, গত ২৩ জুন রাতে তিনি তার অটোরিকশা সাতকরাকান্দি বাজারে রেখে বাড়িতে চলে যান। পরদিন গাড়ি নিতে এসে দেখেন তারসহ এজাহারে বর্ণিত আরও ১১জন সাক্ষির সিএনজি অটোরিকশা থেকে ১২টি ব্যাটারি চোরেরা নিয়ে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ছাইদ আহমদ ওরফে বুলেট রাজা উপজেলার দক্ষিণ গ্রামতলা এলাকার আব্দুস শুক্কুরের ছেলে এবং ইমদাদুর রহমান রাহাত সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক সুব্রত কুমার দাস মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বলেন, ‘ছাইদ আহমদ ওরফে বুলেট রাজা ও ইমদাদুর রহমান রাহাত চোরচক্রের মূল হোতা।
সম্প্রতি একটি বাস থেকে ব্যাটারি চুরির সময় স্থানীয় লোকজন বুলেট রাজাকে দেখে ফেলেন। পরে তারা তাকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। পরদিন তাকে গ্রামতলা বাজার থেকে স্থানীয়রা আটক করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় আসে। এসময় তার কাছ থেকে চুরি করা ২টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদের নাম আমাদের কাছে বলেছে। সে কতটি গাড়ি থেকে ব্যাটারি চুরি করে সেসব তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তার সহযোগি ইমদাদুর রহমান রাহাতকে গ্রেফতার করেছি। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
এরমধ্যে দুটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাইদ আহমদ বুলেটকে। দুটি মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিদের খুঁজে আমরা প্রতিদিনই বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তাদের নাম বলছি না।
পুলিশ অফিসার সুব্রত কুমার দাস বলেন, বুলেট রাজা কখন-কিভাবে গাড়ি থেকে ব্যাটারি চুরি করতো, তা কোথায় নিয়ে বিক্রি করতো, জিজ্ঞাসাবাদে সে এসব কথা আমাদের কাছে বলেছে। বুলেট ও রাহাত দুজনেই এখন কারাগারে আছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেছি।