বড়লেখায় ভারতীয় রেল কোম্পানির ভারী যান চলাচলে বিধ্বস্ত সড়ক : চরম জনদুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০১:৪৯,অপরাহ্ন ২৪ জুলাই ২০১৯
বড়লেখার ডাক প্রতিবেদন: বড়লেখায় রেললাইন পুনঃনির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অত্যধিক ভারী যানবাহনে এলজিইডি’র লাতু-জলঢুপ পাকা সড়ক বেহাল হয়ে উঠেছে। এতে উপজেলার উত্তরাঞ্চলের ৩ ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক জনসাধারণকে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এলজিইডি ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা লিখিতভাবে জানালেও তারা তা মানছে না।
জানা গেছে, উপজেলার লাতু-জলঢুপ এলজিইডি পাকা সড়কটি সর্বোচ্চ ৫ টন মালবাহী যানবাহন চলাচলের উপযোগী। বড়লেখার উত্তরাঞ্চলের মানুষের বিয়ানীবাজার হয়ে সিলেটে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এ সড়কটি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ও নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। গত প্রায় দেড় বছর ধরে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ এ সড়ক দিয়ে অনুমোদনহীন ২৫-৩০ টন মালবাহী অত্যাধুনিক ভারী যানবাহন চালাতে থাকে। এতে অল্পদিনেই রাস্তাটি বেহাল হয়ে উঠেছে। বর্ষায় রাস্তা ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন দেবে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় এ রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বুধবার(২৪জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, লাতু-জলঢুপ রাস্তার আলী ব্রিকফিল্ড সংলগ্ন ২০ গজ জায়গা জুড়ে বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজে নিয়োজিত পাথর-বোঝাই একটি ট্রাক আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচলে রাস্তাটি কাদা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও রেললাইন পুনঃস্থাপন কাজে নিয়োজিত মালবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় লোকজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইট বালু বিছিয়ে কয়েকবার অস্থায়ী মেরামত করা হলেও বেহাল দশা কাটছে না। প্রতিনিয়তই যানবাহন আটকে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার পাথর-বোঝাই একটি ট্রাক আটকে পড়ায় এখনও রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে, দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, চিকিৎসা-প্রার্থী রোগীসহ সাধারণ যাত্রীরা।
এ রাস্তায় ভোক্তভুগী শাহবাজপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান সাদেক বলেন, “ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি দ্রুত স্থায়ী মেরামত করার পাশাপাশি রেললাইন পুনঃস্থাপন কাজের অত্যধিক ভারী মালবোঝাই ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাই।” এছাড়াও ভোক্তভুগী অনেকেই কয়েকদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যক্ত করছেন।
উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম আহমদ খান বড়লেখার ডাক’কে জানান, রেলওয়ের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ভারি লোডের গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে দফায় দফায় তাদেরকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করছে না। রাস্তা বন্ধ হওয়ায় গত দুইদিন ধরে জনসাধারণকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন , লাতু-জলঢুপ রাস্তাটি ৫ টনের অধিক মালবাহী যানবাহন চলাচলের রাস্তা নয়। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃনির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ভারী যানবাহন চলাচলের বিষয় অবগত হয়ে ইতিপূর্বে কয়েক দফা চিটি দিয়ে তাদেরকে ছোট যানবাহনে মালামাল পরিবহন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা বন্ধ করেনি মর্মে স্থানীয়ভাবে তিনিও অবগত। রোববার অনুষ্ঠিতব্য জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় তিনি এ বিষয়টি উত্থাপন করবেন।
ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ এর পরিচালক মি. সঞ্জয় জানান, ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে এ রেল লাইনের পুনঃস্থাপন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নে রাস্তাঘাটের কোন ক্ষতি হলে তা মেরামত করে দেয়া হবে।