সিন্ডিকেটের কবলে ধান ক্রয় কর্মসূচি: বড়লেখায় প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০১:১৯,অপরাহ্ন ২৪ জুলাই ২০১৯
বিশেষ প্রতিনিধি : বড়লেখায় সরকারীভাবে ধান বিক্রিতে প্রকৃত অনেক কৃষক বঞ্চিত ও নানা হয়রানীর শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে কৃষকের নাম ব্যবহার করে ধান বিক্রি করছে প্রভাবশালী মিলার সিন্ডিকেট। এতে হাকালুকি হাওরপারের প্রকৃত কৃষককুলে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস ও ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে থেকে বড়লেখা উপজেলায় সরকারীভাবে কৃষকের নিকট থেকে ১০৪০ টাকা মন দরে ধান ক্রয় শুরু হয়। প্রথমে ১১৯ মে. টন ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরে তা ৩১৭ মে. টনে নেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ১৬০ মে. টন ৭২০ কেজি। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ধানের স্যাম্পল নিয়ে আসলে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা দীপক সূত্রধর ধান কম শুকনো, চিটার পরিমাণ বেশি, রং ঝকঝকে নয় ইত্যাদি নানা অজুহাত দেখিয়ে থাকেন। ধানগুলো ভালভাবে শুকিয়ে ও চিটা ছাড়িয়ে আনার পরামর্শ দেন। ২-৪ দিন পর তার পরামর্শমত ধানগুলো সঠিক করে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘আপনার এলাকা থেকে ধান সংগ্রহের কোটা শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কেনা যাবে না।’ মূলত তিনি মিলারদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে কৃষকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। মিলাররা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে সরকারী দামে বিক্রি করছেন। এতে বড়লেখার কৃষক বঞ্চিত হলেও লাভবান হচ্ছেন মিলার ও খাদ্যগোদাম কর্মকর্তা দীপক সূত্রধর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধান বিক্রয়কারী কয়েকজন কৃষক জানান, গুদামের লেভার খরচ বাবত গুদাম কর্মকর্তা কৃষকের কাছ থেকে টন প্রতি ৭৫০ টাকা আদায় করছেন। এছাড়া ৪০ কেজিতে মন হলেও তিনি ৪২-৪৫ কেজিতে মন ধরেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা খাদ্য গুদামে সরেজমিনে গেলে জনৈক মিলারের ধানভর্তি ট্রাক দাঁড়ানো এবং অন্যপাশে কৃষকের ধানবাহী ছোট যানবাহন থাকতে দেখা গেছে। দাসেরবাজার ইউপির ছোলারকুড়ি গ্রাম থেকে ট্রলিতে করে ধান নিয়ে এসেছেন মোঃ. সালাহ উদ্দিন, শ্রী দারিকা চরণ দাস, মানিক বিশ্বাস প্রমুখ। তাদের ইউনিয়ন থেকে ধান সংগ্রহ শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে খাদ্যগোদাম কর্মকর্তা তাদেরকে ফিরে যেতে বলেন। এসময় কৃষকরা জানায় সেসময় অনুরোধ করা স্বত্বেও নাম এন্ট্রি করেননি। আপনিতো বললেন, কয়েকদিন পরে আসার জন্য, আর এখন বলছেন ধান ক্রয় বন্ধ। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন কৃষককে ফিরিয়ে দিতে দেখা যায়। গুদামের ফটকে ধানভর্তি দাঁড়ানো ট্রাকের চালক আব্দুল কাদির জানান, আব্দুল জব্বার নামক মিলার তাকে ধান দিয়ে গুদামে পাঠিয়েছেন। কিসের ধান এসব কিছু জানেন না। এরই মধ্যে ট্রাক চালক আব্দুল কাদির ধানের ট্রাক নিয়ে সটকে পড়ে।
সূত্র জানায়, মিলারের সাথে আঁতাত করেই গোদাম কর্মকর্তা ভোরবেলা ও মধ্যরাতে ধানের গাড়ি গুদামে আনলোড করেন। মঙ্গলবার সকাল ৭ টার আগে কয়েক ট্রাক ধানের গাড়ি সরকারী গুদামে ঢুকতে দেখা গেছে। মিলারের ধানের বস্তা ভর্তি ট্রাক খাদ্যগুদামে কেন জানতে চাইলে গোদাম কর্মকর্তা দীপক সূত্রধর জানান, হয়তো ভুলে মিলারের ড্রাইভার ট্রাকটি এখানে নিয়ে এসেছে। এক্ষুনি বের করে দেয়া হবে। মঙ্গলবার ভোরে কয়েক ট্রাক ধানভর্তি ট্রাক গুদামে ঢুকার ব্যাপারে বলেন, এগুলো কয়েকজন কৃষকের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ. শামীম আল ইমরান সরকারী কাজে দেশের বাহিরে থাকায় তার মতামত পাওয়া যায়নি।