হাকালুকি হাওরে নির্বিচারে পোনা মাছ নিধন
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩১:৪৭,অপরাহ্ন ১৯ জুলাই ২০১৯
আব্দুর রব|| বুধবার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। মৎস্য বিভাগ একদিকে পালন করছে মৎস্য সপ্তাহ আর অন্যদিকে সংঘবদ্ধ চক্র দেশের সর্ববৃহৎ জলাভুমি হাকালুকি হাওরের পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চালাচ্ছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় হাওরপাড়ের অসাধু চক্র প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন প্রকাশ্যে নানা ধরণের অবৈধ জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার পোনা মাছ আহরনের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। নির্বিচারে হাকালুকির মৎস্য সম্পদ নিধনযজ্ঞ চললেও তা রোধে প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতি রাতের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একেকটি জেলে গ্র“প অবৈধ কাপড়ি জাল, বেড় জাল দিয়ে হাকালুকি হাওরের বড়লেখার পলোভাঙ্গা স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে পোনা মাছ নিধন করছে।
এ ধরণের ৪০-৫০টি গ্র“প হাওরের বিভিন্ন বিল থেকে সারা রাত পোনা মাছ সংগ্রহ করে ভোরে কানুনগো বাজারে নিয়ে বিক্রি করে। পাইকাররা সেখান থেকে খাচায় ভরে ট্রাক ও পিকআপ যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পোনা মাছগুলো পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া বড়লেখার ইসলামপুর, হাল্লা, ভোলারকান্দি, জুড়ীর, গোবিন্দপুর, সায়পুর, পুর্ব বেলাগাও, পশ্চিম বেলাগাও, জাঙ্গিরাই, নয়াগ্রাম, খাগটেকা, কুলাউড়ার ভুকশিমইল এবং ফেঞ্চুগঞ্জের কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক জেলে প্রভাবশালীদের নিকট থেকে অবৈধ জাল ভাড়া নিয়ে পোনা মাছ নিধনযজ্ঞ চালিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুরূপ হাকালুকি হাওরপাড়ের অপর ২ উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জের অসাধু শিকারিরা নির্বিচারে পোনা মাছ ধরছে। ফলে শুধু মাছই নির্বংশ হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে হাকালুকির জলজ উদ্ভিদের অস্থিত্বও।
হোগা (চাপিলা), ইছা (চিংড়ি), কেচকি ও তিতপুঁটি শিকারের নামে এসব মৎস্য শিকারি সিন্ডিকেট শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে হাওরের সব ধরণের পোনা মাছ। তাদের কাছে যেমন মা মাছ বলে কোন মাছ নেই তেমনি ডিমওয়ালা বলেও বাছ-বিচার নেই। দুই শতাধিক বেড়জাল নিয়ে এসব শিকারি ঝাপিয়ে পড়ে হাকালুকিতে। দিনরাত আহরণ করে সব ধরণের মাছ।
শিকারিরা বিত্তবান না হলেও জালের মালিকরা এতই বিত্তবান যে, বিলগুলো ইজারা নেওয়ার সময় তারাই নেন। জালের মালিকরা সৃষ্টি করেছে টোকেন সিস্টেমের। আর এ টোকেন সিস্টেমেই ধংস হচ্ছে হাকালুকির মৎস্য সম্পদ।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাকালুকি হাওরপাড়ের জুড়ীর গোবিন্দপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্র“পকে অবৈধ কাপড়ি জাল দিয়ে পোনা মাঝ ধরতে দেখা গেছে। একেকটি ঝাপে ২ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের গনিয়া, রুই, মৃগেল, তেলাপিয়া, বোয়াল, আইড় মাছের পোনা ধরা পড়ছে।
পোনা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বললে জেলেরা জানায়, তাদের মত শত শত জালিয়া প্রতিদিন হাওরে মাছ ধরছে কেউতো তাদেরকে নিষেধ করনেনি।
কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান আহমদ জানান, হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিলে পোনা মাছ নিধন বন্ধে কিছু অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল জব্দ করেছেন। মৎস্য সপ্তাহের মধ্যেই অবৈধ জালের বিরুদ্ধে বড়ধরণের অভিযান চালানো হবে।
সৌজন্য : বাংলাদেশ টুডে