গ্রেফতার ইউপি সদস্য নিয়ে বড়লেখায় অপহরণ ও গুমের গুজব!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪২:২২,অপরাহ্ন ১৩ জুলাই ২০১৯
জনমনে বিভ্রান্তি, উদ্বেগ ও আতংক দেখা দেয়। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমের কাছে রাজিয়া সুলতানা গ্রেফতারের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক।
জানা গেছে, গত ২৭ জুন টাঙ্গাইলে আক্কাস মিয়া (২৭) নামে সৌদি প্রবাসী এক যুবক অপহরণের ঘটনায় তার পরিবার সদর থানায় জিডি করেন। এ জিডির তদন্তের দায়িত্ব পান ওই থানার এসআই প্রতিমা রানী দাস।
এরই মধ্যে অপহরণকারীরা ওই যুবকের পরিবারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মুক্তিপন দাবি করে। দাবিকৃত টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠাতে বলে একটি নম্বরও দেয়। আক্কাসের পরিবার ওই বিকাশ নম্বরে ৪০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা পাঠানোর পর অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে আর কোন সাড়া না পেয়ে তারা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানায়।
আক্কাসের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশর নম্বরটি নিয়ে কাজ শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারেন অপহরণকারীরা যে বিকাশ নম্বরে টাকা গ্রহণ করেছে সে নম্বরটি রাজিয়া সুলতানা নামের এক নারীর নামে নিবন্ধিত। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজ বাহাদুরপুর এলাকায়।
এর প্রেক্ষিতে ৬ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক প্রতিমা রানী দাস বড়লেখা পুলিশের সহযোগিতায় রাজিয়া সুলতানার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। এরপর রাজিয়ার দেয়া তথ্যমতে তার স্বামীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বড়লেখার সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে পায়নি।
টাঙ্গাইল সদর থানায় আক্কাসের পরিবারের দায়ের করা অপহরণ মামলায় ৭ জুলাই রাজিয়া সুলতানাকে আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রবাসী যুবক অপহরণের এই ঘটনায় আরো বেশ কয়েকজনকেও গ্রেফতার করার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে বড়লেখায় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজিয়া সুলতানাকে অপহরণ ও গুম করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে একজন জনপ্রতিনিধির নাম জড়িয়ে অতি উৎসাহীরা নিজেরমত মিথ্যাচার করতে থাকে। এই ঘটনায় রাজিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি ও মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি বলেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
যদিও রাজিয়া সুলতানা গ্রেফতারের পরপরই তার চাচাতো ভাই অলিউর রহমান বড়লেখা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। থানার ওসি গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বরও তাদেরকে দেন। স্থানীয় নিজবাহাদুর পুর ইউপি চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানানো হয়।
রাজিয়ার ভাই হোসেন আহমদ ও চাচাতো ভাই অলিউর রহমান জানান, পুলিশ আপাকে ধরে নিয়ে গেছে এই খবরে আমরা থানায় খোঁজ নেই। ওসি স্যার গ্রেফতারের কথা জানান। এরপর টাঙ্গাইলের এসআই স্যারের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করার কথা বলেন। বড়লেখার ওসি স্যার আমাদের অনেক হেল্প করেছেন। অনেকে না জেনে ফায়দা নেয়ার জন্য অপপ্রচার করেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, রাজিয়া গ্রেফতার হয়েছেন এটি পুলিশ রাজিয়ার পরিবারকে জানিয়েছে। আমাকেও জানিয়েছে। তার পরিবার প্রথম নিশ্চিত হয়েছে। আমি টাঙ্গাইলের থানার এসআইর সাথে কথা বলেছি। একটা সত্য ঘটনাকে নিয়ে কেন বিভ্রন্তি ছড়ানো হয়। যার পরিবারের সদস্য গ্রেফতার হয়েছে তার থেকে ব্যক্তি বিশেষের দরদ বেশী হয়ে গেল। তারা রাজিয়া অপহরণ ও গুম হয়েছে বলে অপপ্রচার করছে। এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার এসআই প্রতিমা রানী দাস রাজিয়াকে গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমাদের থানায় একটি জিডি পরবর্তীতে অপহরণ মামলায় যায়। বড়লেখার রাজিয়াকে গ্রেফতারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, উনার আইডি কার্ড দিয়ে একটি সিম উঠানো হয় এবং রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। ওই সিম দিয়ে ভিকটিমের বাবার কাছে ফোন করে বলা হয়েছে, আপনার ছেলে আমাদের কাছে আছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন।
মুক্তিপনটা চাইছে থানায় জিডি করার পর। ছেলের বাবা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। টাকা পাওয়ার পরই ফোন বন্ধ করা হয়। সিমটি রাজিয়ার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা। ওই নম্বরে টাকা গ্রহণের বিষয় নিশ্চিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ জুলাই রাজিয়া সুলতানাকে আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, ‘রাজিয়াকে গ্রেফতারের পরই তার পরিবারকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করি। তদন্তকারী অফিসারের নম্বর দেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও জানাই। কিন্তু একটি তদন্তাধীন মামলায় গ্রেফতার নিয়ে কিছু লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ পুলিশকে নিয়ে ইচ্ছামত মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে। রাজিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ না করে এ সমস্ত বক্তব্য দিচ্ছে। যা দু:খজনক। ভবিষ্যতে এই ধরনের মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার অনুরোধ করছি।