চা শিল্পের স্বার্থেই বাগানগুলোতে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৬:০১,অপরাহ্ন ০৯ জুলাই ২০১৯
চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত উৎপাদন ও নানামুখী সমস্যায় দেশের চা শিল্পে যখন টানাপোড়ন চলছে তখন চা বাগান অধ্যুষিত বড়লেখায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চা-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতীর ঘটনাটি হতাশা ও উদ্বেগের বিষয়। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ— গত শুক্রবার (০৫ জুলাই) তারিখে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-বোনাস, বিদ্যালয় নির্মাণ, স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ মোট ৭দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে অনির্দষ্টকালের কর্মবিরতীতে নামে। আয়েশাবাগ চা বাগানের শ্রমিকদের অভিযোগ, বাগান কর্তৃপক্ষ বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাদের এসব দাবী বাস্তবায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা কর্মবিরতীতে নেমেছেন।বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আশার কথা হলো রোবার(৭জুলাই) শ্রমিকদের এ কর্মবিরতীর তৃতীয় দিনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটনের আশ্বাসে কর্মবিরতী স্থগিত করে কাজে ফিরে যান শ্রমিকরা।
উল্লেখিত আয়েশাবাগ চা বাগান ছাড়াও বড়লেখার বেশ কটি চা বাগানের শ্রমিকদের বাসস্থান, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও চিকিৎসার সংকট খুবই ভয়াবহ। নিয়মঅনুযায়ী প্রতিটি চা বাগানে মানসম্মত চিকিৎসাকেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও অনেক বাগানেই তা নেই। যেসব বাগানে চিকিৎসা কেন্দ্র আছে , সেগুলোও নামমাত্র। চিকিৎসা সামগ্রী অপর্যাপ্ত; অদক্ষ চিকিৎসক থাকায় সু-চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় চা শ্রমিকদের অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। চা বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকদের ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক নারী। সুচিকিৎসা এবং সচেতনতার অভাবে অনেক গর্ভবতী মহিলারও প্রাণহাণি ঘটে। চা বাগানগুলোর এসব অব্যবস্থাপনাকে গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখতে প্রশাসনকে আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
আমরা সকলেই জানি, যুগ যুগ ধরে চা শ্রমিকরা বঞ্চিত। প্রায় সারা বছর সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোদ- বৃষ্টিতে কাজ করলেও তারা ন্যায্য পারিশ্রমীক পায় না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করা একজন চা শ্রমিকের মজুরি মাত্র ৮৫ টাকা। এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৮৫ টাকা মজুরি ছাড়াও তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক বাগানে নেই বললেই চলে।তবুও বাগানে কাজ করে কোনমতে খেয়ে পরে বেঁচে আছে তারা।
সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত যাদের শ্রমে আর ঘামে কোটি কোটি টাকার চা পণ্য উৎপাদিত হয় তাদেরকে দাস প্রথার মতো অমানবিক অবস্থার মধ্যে রেখে এই শিল্প ঠিকিয়া রাখা সম্ভব নয়।
একটা সময় চা ছিলো এদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্যের অবস্থানে।কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। উৎপাদনের তুলনায় দেশে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই বিদেশ থেকে চা আমদানী করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। আগের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ০১ শতাংশ, কিন্তু চাহিদা বেড়েছে ০৪ শতাংশ।
তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিদেশী চায়ের সাথে প্রতিযোগিতার টানাপোড়নে পড়তে হচ্ছে দেশীয় চা কেম্পানীগুলোকে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসুন্তুষের বিষয়টি গোঠা শিল্পের জন্যই এক অশুভ কালো ছায়া। তাই চা বাগানগুলোতে দ্রুত শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা কেবল চা শ্রমিকদের স্বার্থেই নয়, চা শিল্পের স্বার্থেই অতীব জরুরী।