পঞ্চাশতম জন্মদিনে সুহৃদদের ভালোবাসায় সিক্ত মোস্তফা সেলিম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১১:১৯,অপরাহ্ন ২৯ জুন ২০১৯
সেলিম আহমেদ :: একাধারে দেশের খ্যাতিমান প্রকাশক, লেখক, সংগ্রাহক ও নাগরিলিপি-গবেষক। যে মানুষটি এতগুলো গুণের অধিকারী সেই গুণী মানুষটির জন্মদিনটা অন্য রকম হবে না, তা কী করে হয়? তাই তো প্রিয় মানুষগুলো গান, কবিতা আর শ্রদ্ধায় জাঁকজমক করে পালন করেছে তাদের মোস্তফা সেলিমের পঞ্চাশতম জন্মদিন।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর পিবিএস মিলনায়তনে জন্মদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য পরিষদ। কবি-সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। নগরজীবনের ক্লান্তি ভুলে সবাই মেতে উঠেন আড্ডা উচ্ছাসে।
শুরুতেই মোস্তফা সেলিমকে উত্তরিও পরিয়ে দেন সুহৃদরা। এরপর সবাই মিলে জন্মদিনের কেক কাটেন। আগত সকল সুহৃদদের গাণের মাধ্যমে স্বাগত জনান দেশের আরেক খ্যতিমান কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী।
নিখাঁদ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রীতিতে উষ্ণতায় ভরা ভালোবাসা পেয়ে আপ্লুত মোস্তফা সেলিম।চুপচাপ স্বভাবের মানুষটি প্রিয়জনদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা আগে পেলেও এই দিন তার জীবনের সেরা দিন হয়ে থাকবে বলে জানান।
মোস্তফা সেলিম বলেন, আমি আজকের এই দিনটার জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আবেগে আপ্লুত। প্রকাশকদের জন্মদিন এমন ঘটা করে এর আগে করা হয়নি। যার জন্য আমি আপনাদের কাছে চীর ঋণী হয়ে গেলাম। যারা আমার এই ক্ষুদ্র জীবনকে ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়েছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ।
জন্মদিন অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের গল্প কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেন গুণী এই মানুষটি। শিক্ষকতা ছেড়ে প্রকাশক হওয়ার গল্পটা বলেন- ‘প্রকাশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা আমার জন্য খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আপনাদের ভালোবাসা আর সহযোগিতা আমাকে প্রকাশক হওয়ার পথে সাহস যুগিয়েছে।’
মোস্তফা সেলিম তার জন্মদিন অনুষ্ঠানে জানালেন তার ভালোবাসার কাজ নাগরিলিপির গবেষণার কথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি মৃত বর্ণলিপিকে আমি প্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই কাজের জন্যই আপনারা আজকের দিনে আমার জন্মদিন পালন করছেন। আমি চাই নাগরিলিপি বাংলা সাহিত্যে জীবন পাক।
অনুষ্ঠানে পাঞ্জেরী প্রকাশকের কর্ণধার কামরুল হাসান সায়ক বলেন, সেলিম আমাদের খুব কাছের মানুষ। যে মানুষটার আজ জন্মদিন পালন করছি, তাকে নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তিনি তার কাজের মাধ্যমে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যকে তিনি সংগ্রহের মাধ্যমে অন্য রকম এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, নাগরিলিপির জন্য সেলিম আমাদের বাংলা সাহিত্যে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে। তিনি আমাদের সবার পছন্দের আর ভালো মানের একজন প্রকাশক-কবি-লেখক-সংগ্রাহকও।
প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, একজন মানুষকে কাছে থেকে জানতে হলে বুঝতে হলে তার সাথে ভ্রমণ করতে হবে। আমি সেলিমের সাথে থেকে তাকে দেখেছি। মোস্তফা সেলিম তার কাজের মাধ্যমে তার জাত ছিনিয়েছেন।
কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক পারভেজ হোসেন ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, যত দিন যাচ্ছে সেলিম তার কাজের মাধ্যমে আরও তীক্ষ্ণ হচ্ছেন। সবাই যখন গুণী মানুষটির গুনের কথা শুনতে শুনতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তখন উপস্থাপক ভাবলেন এরই মধ্যে গান হলে মন্দ হয় না। নিয়ে এলেন শিল্পী সেলিম চৌধুরীকে। যে মানুষটির জন্মদিন পালন করা হচ্ছে তারই মিতা সেলিম পেশায় শিল্পী হলেও ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে দু’একটা বাক্য জুড়ে দিবেন না তা কি হয়। তিনিও সবার মত করে শোনালেন গুণী মানুষটির গুণের কথা। তারপরই কন্ঠ ছেড়ে গাইলেন ‘বন্ধু তোর লাইগা রে’।
অনুষ্ঠানে প্রিয় সেলিমকে নিয়ে আরও ভালোবাসার কথামালা ছড়িয়ে দেন তার সুহৃদ কথাসাহিত্যিক, লেখক, কবি, সাংবাদিকসহ আরও গুনিজনরা। তাদের মধ্যে ছিলেন কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার, কবি তপন বাগচী, চলচ্চিত্র নির্মাতা সরোয়ার তমিজউদদীন, কবি ও শিক্ষক জেবুন্নেছা হেলেন, কবি হেনা নূরজাহান, কবি লিলি হক, কথাসাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম মুনির, প্রকাশক শিহাব উদ্দিন ভুঁইয়া, মঈন মুরসালিন, মামুন খান ইউসুফজী, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, রোটারিয়ান সৈয়দ ফরহাদ আব্বাস, রোটারিয়ান ইমরান চৌধুরী, খ্যাতিমান প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক, অন্যদিন সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, কবি ও সাংবাদিক সৌমিত্র দেব। এছাড়া লেখক পুত্র নাফিস উৎস তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের অন্যতম দিকপাল ওসমান গনি সভাপতিত্বে এই আনন্দ আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ইফতেখার আমিন। প্রিয় প্রকাশককে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, সাংবাদিক সেলিম আহমেদ প্রমুখ।