ভূমধ্যসাগর ট্রলারডুবি ট্রাজেডি:বড়লেখায় জুয়েলের বাবা-মা ছেলের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩০:২৪,অপরাহ্ন ২৮ জুন ২০১৯
এদিকে ইটালি পাঠানোর নামে ৮ লাখ টাকার কন্টাক্টে ১৪ লাখ নিয়েও লিবিয়ায় জিম্মি করে আরো ৪ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা ও নৌকা ডুবিতে ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা আয়শা আক্তার স্থানীয় দালাল নাসির উদ্দিন, তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের নাম উল্লেখ ও আরো ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মানব পাচার ও মানি লন্ডারিং আইনে থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ রোববার (২৩ জুন) নাসিরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করেছে। অপর দিকে নিখোঁজ জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন ও বিয়ানীবাজারের নিখোঁজ যুবক আব্দুল হালীম সুজনের ভাই আব্দুল আলীম সুমন দালাল নাসির উদ্দিন, বদরুল হোসেন, লিবিয়ায় অবস্থানরত পারভেজ আহমদসহ আদম পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক মামলা করেছেন।
জানা গেছে, গত ৮ মে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অন্যান্যের সাথে বড়লেখার ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে জুয়েল আহমদ নিখোঁজ হন। বেকারত্বের অভিসাপ থেকে মুক্ত উন্নত জীবনের আশায় সে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার বাবা জামাল উদ্দিন রাজস্ব বিভাগের কর্মচারি হিসেবে অবসর নেন। কিছু টাকায় শাহবাজপুর বাজারে কম্পিউটার কম্পোজিংয়ের দোকান দেয় জুয়েল। সেখানে গিয়ে উপজেলার বোয়ালি গ্রামের আনফর আলী আনইর ছেলে স্থানীয় দালাল নাসির উদ্দিন তাকে ইটালি যাওয়ায় প্রলুব্দ করে পৌছানোর আশ্বাস দেয়। বাবার পেনশনের টাকার ওপর ভর করে ইটালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন জুয়েল। কথা হয় লিবিয়ায় পৌছানোর পর ৫ লাখ ও ইটালি পৌছানোর পর ৩ লাখ টাকা দেয়া হবে। কন্টাক্ট অনুযায়ী দালাল নাসির উদ্দিনকে গত ১০ মার্চ চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন। জুয়েলকে ইটালি না পাঠিয়ে সেখানে অবস্থানরত দালাল পারভেজ, বাংলাদেশে অবস্থানরত সিলেটের বিশ্বনাথের কাটলি পাড়ার রফিক উদ্দিন, বিয়ানীবাজারের ফেনগ্রামের বদরুল হোসেন, বড়লেখার বোয়ালি গ্রামের নাসির উদ্দিন সিন্ডিকেট করে লিবিয়ায় জিম্মি করে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতাতে থাকে। শুধু জুয়েল কিংবা ফাহাদ নয় আরো অসংখ্য ইউরোপ/ইটালি গামী বাংলাদেশিদের আটকে রেখে টাকা আদায় করেও তাদেরকে মৃত্যুমুখে টেলে দিচ্ছে।
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন জানান, নাসির উদ্দিন ৮ লাখ টাকায় ইটালি পৌছানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে বিভিন্ন দাগে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। সর্বশেষ ৭ মে জুয়েল তার সাথে ফোনে কথা বলে। সে জানায়, তাকে বন্দি রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নৌকাডুবির ঘটনার পর আমার ছেলের খোঁজ করে দেয়ার জন্যও দালালরা ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখনও আমরা তার ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।
নিখোঁজ জুয়েলের বোটে থাকা দেশে ফেরা ফেঞ্চুগঞ্জের সহিদ পুরের বিলাল আহমদ ও সিলেটের রুবেল আহমদ জানান, লিবিয়ায় অবস্থানরত দালাল পারভেজ সিলেটের বিভিন্ন এলাকার ৫০-৬০ জন ইটালিগামী বাংলাদেশিকে জিম্মি রেখে তাদের বাড়ি থেকে এদেশিয় দালালদের মাধ্যমে টাকা আদায় করছে। এসব বন্দিরা নানা সমস্যায় জর্জরিত।
এ দিকে বিয়ানীবাজারের বাড়দা গ্রামের আব্দুল হালীম সুজন একই দিন ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হন। আব্দুল হালীম সুমনের ভাই আব্দুল আলীম সুমন নিখোজ হওয়ার খবর নিশ্চিত করে জানান, তাদের সিএনজি চালিত একমাত্র অটোরিকশা ও জমি বিক্রয় করে টাকা যোগাড় করেন। দারিদ্র বিমোচন ও সুখ সমৃদ্ধির আশায় বড়লেখা উপজেলার বোয়ালী গ্রামের আদম ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য শামীম ও তার ভগ্নীপতি একই উপজেলার ইটাউরী গ্রামের আব্দুল কালাম মারফৎ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ তুলে দেন। কিন্ত তাকে ইটালি না পৌছে লিবিয়ায় আটক রেখে পরে ট্রলারে পাঠানোর সময় নিখোজ হয়। আজও আমরা তার সন্ধান পাইনি।
অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন জানায়, সে শুধুমাত্র বিয়ানীবাজরের আদম বেপারি বদরুল হোসেনের সাথে ইটালি যেতে ইচ্ছুকদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। টাকা নিলেও তিনি তা বদরুলের হাতেই তুলে দিতেন। বদরুল ঢাকার দালালদের মাধ্যমে লোকজনকে লিবিয়া পাঠাতো।
বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে নিহত ফাহাদ আহমদের মা আয়েশা আক্তার দালাল নাসির উদ্দিন, তার স্ত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এ মামালায় নাসিরের স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিনও মানব পাচারকারী নাসির উদ্দিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।