বাবুল গোমেজ থেকে বাংলা সিনেমার খলনায়ক সেই জাম্বু
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৬:৫৫,অপরাহ্ন ২৬ জুন ২০১৯
উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর শহরের পার্বতীপুরের এক মেথরপট্টিতে একসময় থাকতেন তিনি। ঢাকায় কাজের সন্ধানে এসে ঘটনাক্রমে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হয়।
বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সাদাকালো সময় থেকে শুরু করে রঙিন ছবি পর্যন্ত দাপটের সাথে যুক্ত ছিলেন সিনেমার পর্দায়। তার লুক ছিল রুদ্রমূর্তির মতো। ভয় পাইয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। ভয়েসেও সেই রুদ্রতা ছিলো।
সিনেমাতে তার খলনায়কের ভূমিকাই বেশি। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ত বস্তি আক্রমণ, সওদা করে খুন করা, মূল খলনায়কের সহকারী ইত্যাদি ভূমিকায়। পর্দা রসায়ন জমত বেশি নায়ক জসিমের সাথে।
অনেক ছবির মধ্যে ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবির মোহাম্মদী বেগ চরিত্রে। তার হাতেই নবাবের মৃত্যু হয়। মোহাম্মদী বেগকে নবাব কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। নিজের কাছে রেখেছিলেন কিন্তু ইংরেজ শাসকের সাথে হাত মিলিয়ে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার সাথে একাত্মতা পোষণ করে।পরে মীরজাফরের পুত্র মীরনের আদেশে হত্যা করে নবাবকে। মোহাম্মদী বেগ চরিত্রে জাম্বু ছিল উপযুক্ত।
সাহিত্যভিত্তিক ছবি ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’এর অর্জুন সিং চরিত্রে জাম্বু ছিল। তার কাজ ছিল সাহেবদের হুকুম পালন করা।ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তির খলনায়ক ছিল অনেক ছবিতে। ‘হিরো’ ছবিতে জেলখানায় কয়েদিদের নেতা হয়ে ভয়ানকভাবে হাজির হয়। সবার ভাত কেড়ে নিয়ে একাই খেতে থাকে। জসিমের সাথে তার যুদ্ধ চলে। ‘রকি’ ছবিতে বক্সার জসিমের সাথে তাঁর ফাইটিং উপভোগ্য ছিলো।
জসিমের সাথে ‘মোহাম্মদ আলী’ ছবিতেও দারুণ রসায়ন ছিল। ‘রাস্তার রাজা’ ছবিতে গেটআপ ছিল রুদ্রমূর্তির। ইয়া বড় জাঁদরেলি গোঁফে তাঁকে দেখলে ভয় লাগে। ‘রাস্তা’ ছবিতে মাহমুদ কলির পথ আটকে দাঁড়ায় বারবার। তখন তাঁকে দেখতে বিশাল লাগত মাহমুদ কলির তুলনায়। রুবেলের সাথে ‘সন্ত্রাস, রুবেল আমার নাম, বজ্রপাত’ এ ছবিগুলোতেও ফাইট দেখার মতো ছিল। ‘নির্মম’ ছবিতে আলমগীর জাম্বুর হাতে মার খায় কারণ শাবানাকে কথা দিয়েছিল মারামারি করবে না। শাবানা মানতে পারে না। জানায় অন্যায়ভাবে মার খাওয়ার কথা তাকে বলেনি তাই আবার গিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে বলে। আলমগীর তখন ফিরে গিয়ে জাম্বুকে পিটিয়ে আসে। উপভোগ্য ছিল। রিয়াজের ‘মাটির ফুল’ ছবিতেও অসাধারণ লেগেছে জাম্বুকে।
‘প্রেম দিওয়ানা’ ছবিতে জাম্বুর একটা উল্লেখযোগ্য দৃশ্য ছিল। কাজে ব্যর্থ হওয়ায় হুমায়ুন ফরীদি জাম্বুকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। মারার আগে জাম্বুকে মুখোমুখি বসিয়ে শর্ত দেয়া হয় ফরীদি যে গানটি গাইবে তার শেষের অক্ষর দিয়ে জাম্বুকে গাইতে হবে। যতক্ষণ এভাবে গাইতে পারবে ততক্ষণ জীবিত থাকবে। না পারলে গুলি করা হবে। তিনবার পারলেও চারবারের সময় জাম্বু আর পারে না এবং গুলিতে মরতে হয়।
এর পাশাপাশি ‘দেন মোহর’ ছবিতে নাসির খান কাজে ব্যর্থতার জন্য জাম্বুকে পোষা কুকুর দিয়ে মেরে ফেলে। মর্মান্তিক ছিল।
পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছিল ‘আত্মরক্ষা’ ছবিতে। এ ছবির নায়ক ছিল ‘লাভ স্টোরি’ ছবির পল্লব। দুলারীর হুকুমের গোলাম ছিল জাম্বু। তাকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে কাজ করায়। শেষে জাম্বুর হাতেই মৃত্যু হয় দুলারীর।
জাম্বুর কিছু গানও আছে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ছবিতে।
শক্তিমান এই অভিনেতার মৃত্যু হয় ২০০৪ সালের ৩ মে।বর্তমান প্রজন্মের কাছে জাম্বু বলতে গেলে অনেকটা বিস্মৃত অধ্যায়। মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো লেখালেখি হয় না। দেশীয় চলচ্চিত্রের একনিষ্ঠ ভক্ত-দর্শকরা তাকে মনে রেখেছে এবং তাদের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন জাম্বু।
জাম্বুর উল্লেখযোগ্য ছবি :
সাগর ভাসা, এক মুঠো ভাত, রক্তের দাগ, শীষনাগ, সেলিম জাভেদ, হাসান তারেক, নির্দোষ, মোহাম্মদ আলী, ধর্ম আমার মা, ডাকাত, নবাব, রাস্তা, রাস্তার রাজা, রকি, আত্মরক্ষা, পরিবার, সন্ত্রাস, অতিক্রম, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, উত্থান পতন, নয়নমণি, হাবিলদার, বিজয়, ঝুমুর, গোলাবারুদ, বাঘা বাঘিনী, সমর, অপরাজিত নায়ক, আপোষ, বিজলী তুফান, মাটির ফুল, পালকি, রুবেল আমার নাম, আঁচল বন্দী, টাইগার, বনের রাজা টারজান, হিরো, রাজাবাবু, নয়া লায়লা নয়া মজনু, শিকার, শত্রু ধ্বংস, আত্মত্যাগ, ঘাতক, কালিয়া, বন্ধু, সাজা, দোস্ত দুশমন, রাখাল রাজা, নয়নের আলো, বজ্রপাত, খুনের বদলা, অঙ্গার, বিপ্লব, যোদ্ধা, অভিযান, উসিলা, নিষ্পাপ, অমর, মৃত্যুদণ্ড, জ্যোতি, সাথী, মূর্খ মানব, দেন মোহর, প্রেম দিওয়ানা, চাকর, ববি, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, দায়ী কে, মিস লংকা, সাগরিকা, নির্মম ইত্যাদি।
অবদান : রহমান মতি