মৌলভীবাজারে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৪:২৯,অপরাহ্ন ০৮ আগস্ট ২০২৪
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মৌলভীবাজারের জনজীবন। সড়কে অফিসগামী মানুষের আধিক্য বাড়লেও গণপরিবহন ছিল অন্যান্য দিনের মতই। ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। মঙ্গলবার সারাদেশে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ট্রাফিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার ব্যাটেলিয়ানকে। এরপর ধেকে মৌলভীবাজারে বিভিন্ন সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে কাজ করতে দেখা গেছে আনসার সদস্যদের। আনসারদের সহযোগীতায় রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা ও স্কাউট সদস্যরা। শহরের বাসিন্দা পিন্টু আহমদ বলেন, গত কয়েক দিন দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিলো। আজ তো মনে হচ্ছে সব কিছু স্বাভাবিক। অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছি। এদিকে মঙ্গলবার থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও বুধবার শিক্ষা কার্যক্রম সেভাবে শুরু হয়নি কোথাও। শিক্ষার্থীশূন্য বেশিরভাগ ক্লাসরুম। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনও ফাঁকা। তবে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল বেশ।
গত সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে মৌলভীবাজার শহরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্তরা। শহরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুর্বৃত্তরা একের পর এক বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করে। তারা সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর শহরের বেরিপাড়স্থ বাড়ি, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ এম এ রহিম শহীদ সিআইপি’র বাসা ও বাণিজ্যিক মার্কেট, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুমেল আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সমরেশ দাস জিশু’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ম্যানেজার স্টল ও রাধিকা স্টল, যুবলীগ নেতা আকাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মামার বাড়ি রেস্টুরেন্ট, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় সেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনির বাসা ছাড়াও সৈয়দ মানি একচেঞ্জ, মৌলভীবাজার পৌরসভা, মৌলভীবাজার মডেল থানাসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। স্থানীয় লোকজন জানান কয়েকশ’দুর্বৃত্ত একইসঙ্গে এই অপকর্ম চালায়। তাদেরকে বাধা দিয়ে কোনো ভাবেই নিবৃত্ত করা যাচ্ছিল না। তারা বেশির ভাগই স্থানীয় নয়। তারা সবাই ছিল অপরিচিত। তারা জানান হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর তারা বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বালিয়ে সবকিছুই পুড়িয়ে ফেলে। দুর্বৃত্তরা আলহাজ এম এ রহিম সিআইপি’র বাসা থেকে ব্যবহৃত সকল আসবাবপত্র নগদ টাকা লুটে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করে ও তার বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এতে তার বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। সাইফুর রহমান রনির বাসা থেকেও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। পরে ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগও করে। তবে এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজ বাসাবাড়িতে ছিলেন না। এমনকি এ সময় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ছিল বন্ধ। ওইদিন রাত ও মঙ্গলবার নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ছিলেন সংখ্যালঘু, আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালানোর কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে এমন উদ্বিগ্নতা বাড়ে। এমতাবস্থায় মৌলভীবাজার শহরের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের ভয়ভীতি কাটাতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সকলের দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শহর জুড়ে মাইকিং করান সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান। সেই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের শান্তি শৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দায়িত্বশীল প্রহরীর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন। এম নাসের রহমানের এমন উদ্যোগ জেলা শহরের আইনশৃঙ্খলা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার এমন মাইকিং ও নির্দেশনার পর থেকে দলের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বাসাবাড়ি, সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়ি ও ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষায় সক্রিয় হন। এ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই পাহারায় নিয়োজিত হন। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে কুলাউড়ায় পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে কোটা