বন্যায় মৌলভীবাজারে ৪৭৪ টি গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ছয় হাজার পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০১:০৫,অপরাহ্ন ২১ জুন ২০২৪
মো: মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার :: গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাকালুকি হাওর। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওর পারের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ওইসকল মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ২০৫ টি আশ্রয়কেন্দ্রে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুঁটছে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। বন্যা আতঙ্কে নির্মুঘ রাত পার করছেন সাত উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
এদিকে মৌলভীবাজারে সদর ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে বড়লেখা উপজেলায় ভাগাডহর গ্রামে বন্যার পানি দেখতে আয়শা বেগম (১২) নামে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত আয়শা ওই গ্রামের মো: সমছ উদ্দিনের মেয়ে। অন্যদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ছাদি মিয়া (৮) নামে এক শিশু ও হৃদয় মিয়া (১৭) নামে এক কিশোর মারা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো, পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ও একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, গত সোমবার ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত হয়। এতে করে নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট প্লাবিত হলে ঈদের দিনে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। এতে করে জেলার প্রায় সাতটি উপজেলার প্রায় ৪৭টি ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
গত সোমবার রাতে প্লাবিত হয়ে যায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মঙ্গলবার ও বুধবার সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার পর পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, মৈন্তাম, গুপ্তগ্রাম, ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, কুরবানপুর, মুক্তাজিপুর, জাবদা, কালেশার, কাইরচক, চিলারকান্দি, কানেহাত, জয়চন্ডী ইউনিয়নের রামপাশা, আবুতালিবপুর, মীরবক্সপুর, দিলদারপুর, মিঠুপুর, আলমপুর, লৈয়ারহাই উপজেলার প্রায় শতাধিক এলাকায় প্লাবিত হলে লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবর নিতে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ। এদিকে কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ রান্না করা খাবার বিতরণ করেন পৌরসভার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে। কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান ও ভুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির তাদের ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে নিজ উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরন করেন। এছাড়া কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই পৌরসভার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও জয়চন্ডী ইউনিয়নে শুকনো খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে।
২০ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নের ৪৭৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে দুই লাখ ৮১ হাজার ৯২০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় প্রস্তুতকৃত আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২০৫ টি। সরকারিভাবে ৪২২ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া শুকনো ৪৬৫ প্যাকেট খাবার ও রান্না করা ১২০০ প্যাকেট খাবার বিতরন করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী গবাদিপশুর সংখ্যা ২০০ টি। বন্যা উপদ্রুত এলাকা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২৪০টি ১০ লিটার পরিমাপের বোতল, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ ৬৫,০০০ টি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার ১০টি, জুড়ী উপজেলার ৬টি, কুলাউড়া উপজেলার ৮টি, সদর উপজেলার ৮টি এবং রাজনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের ৪টি, শ্রীমঙ্গলের ৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যাক্রান্ত উপজেলাসমূহে সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সবকটি উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ভুক্তভোগী প্রায় ছয় হাজার ২৫৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৩৬