মৌলভীবাজারে বন্যায় প্লাবিত ৪৭৪ গ্রাম, পানিবন্দি তিন লাখ মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০২:৪৮,অপরাহ্ন ২০ জুন ২০২৪
মো: মছব্বির আলী/মাহফুজ শাকিল: গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাকালুকি হাওর। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওর পারের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পানি অঝোর ধারায় প্রবেশ করছে। এদিকে জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী এই চারটি নদ-নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার।
পানিবন্দি মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ২০৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুঁটছে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। বন্যা আতঙ্কে নির্মুঘ রাত পার করছেন সাত উপজেলার লাখো মানুষ।
জানা যায়, সোমবার ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত হয়। এতে করে নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট প্লাবিত হলে ঈদের দিনে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক ঈদগাহে পানি উঠে যাওয়ায় ঈদের নামাজ হয় উচুঁ স্থান ও মসজিদে। এতে করে জেলার প্রায় সাতটি উপজেলার প্রায় ৪৭টি ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
গত সোমবার রাতে প্লাবিত হয়ে যায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মঙ্গলবার ও বুধবার সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার পর পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, মৈন্তাম, গুপ্তগ্রাম, ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, কুরবানপুর, মুক্তাজিপুর, জাবদা, কালেশার, কাইরচক, চিলারকান্দি, কানেহাত, জয়চন্ডী ইউনিয়নের রামপাশা, আবুতালিবপুর, মীরবক্সপুর, দিলদারপুর, মিঠুপুর, আলমপুর, লৈয়ারহাই উপজেলার প্রায় শতাধিক এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এতে কুলাউড়া শহরের সাথে ভূকশিমইল ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের সড়কপথে আংশিক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবর নিতে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। অন্যদিকে বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ। এদিকে কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ রান্না করা খাবার বিতরণ করেন পৌরসভার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে। কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান ও ভুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির তাদের ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে নিজ উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরন করেন। এছাড়া কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই পৌরসভার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও জয়চন্ডী ইউনিয়নে শুকনো খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া পরিবারের খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি এসব পরিবারের মধ্যে রান্না করা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার জুগিডর এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল প্রমুখ।
এদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পাড়ে জুগিডর, মাছুয়াখালী এলাকা ও রাজনগর উপজেলার খাস প্রেমনগর এলাকায় বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি প্রবেশ রোধ করা হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে।
১৯ জুন বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নের ৪৭৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই লাখ ৮১ হাজার ৯২০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় প্রস্তুতকৃত আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২০৪ টি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার ১০টি, জুড়ী উপজেলার ৬টি, কুলাউড়া উপজেলার ৮টি, সদর উপজেলার ৮টি এবং রাজনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের ৪টি, শ্রীমঙ্গলের ৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যাক্রান্ত উপজেলাসমূহে সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সবকটি উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ভুক্তভোগী প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর ।