কুলাউড়ায় রাস্তা নির্মাণ করতে না দেওয়ায় গোয়াল ঘর জ্বালানোর অভিযোগ দিয়ে প্রতিপক্ষকে মামলা দিয়ে হুয়রানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৯:৩৯,অপরাহ্ন ০৬ নভেম্বর ২০২২
বিশেষ প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মহেষগৌরি গ্রামে জোরপূর্বক প্রতিপক্ষের জায়গা দিয়ে রাস্তা নির্মাণের বিরোধের জেরে গোয়াল ঘর জ্বালানোর নাটক সাজিয়ে এক নিরীহ পরিবারকে হুয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গোয়াল ঘর জ্বালানোর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানায় মামলা দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে একই গ্রামের প্রভাবশালী বাসিন্দা আছলম মিয়া গংরা। এই ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ আছলম মিয়ার মামলা আমলে নিলে কুরফান আলী গং এর চারজন লোক কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় যেকোন সময় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। কুরফান আলীর পরিবারের দাবি, প্রতিপক্ষ আছলম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ভাই এডভোকেট কামরুল ইসলামের প্ররোচনায় গোয়াল ঘর জ্বালানোর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সাজানো মামলায় পুলিশ দিয়ে হুয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে কুরফান আলী তাঁর বসতবাড়ির সম্পত্তি জবরদখল করার চেষ্টা ও মিথ্যা মামলা দায়েরে পুলিশি হুয়রানির অভিযোগ এনে গত ৩১ অক্টোবর জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের পারিবারিক রাস্তা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে মহেষগৌরি গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাছন আলীর ছেলে কুরফান আলী (৫৬) ও মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে অলিউর রহমান (৪০) ও একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত সৈয়দ মিয়ার ছেলে আছলম মিয়ার
বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সেই বিরোধের জেরে গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারটায় কুরফান আলী ও অলিউর রহমানের জায়গা দিয়ে আছলম মিয়া গং জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালায়। এসময় কুরফান ও অলিউর তাদের মালিকানাধীন জমিতে রাস্তা তৈরি না করতে প্রতিপক্ষকে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের
মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। রাস্তা নির্মাণ করতে না পেরে এ ঘটনায় আছলম মিয়ার বাড়িতে গোয়াল ঘর জ্বালানো হয়েছে বলে অভিযোগ এনে কুরফান আলী ও অলিউর রহমান গং এর ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আছলম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা
বেগম। এদিকে নিজেদের জমি রক্ষার জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়ে কুরফান আলী গত ১৩ অক্টোবর কুলাউড়া থানায় আছলম মিয়া গংসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তাদের
বসতবাড়িতে হামলার অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য ২০ অক্টোবর কুলাউড়া থানায় একটি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বিচারের জন্য উভয়পক্ষকে
ডাকেন। উভয় পক্ষের মধ্য সমঝোতা না হওয়ায় বৈঠক আর হয়নি। পরবর্তীতে ঘটনার ১০ দিন পর আছলম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের করা অভিযোগটি (মামলা নং-২৮) থানায় রেকর্ড করে পুলিশ। এই সুযোগে ওইদিন রাতে পুলিশ মামলার আসামী ধরতে গেলে কুরফান গং রা বাড়ি থেকে সরে গেলে প্রতিপক্ষরা
রাতের আধারে রাস্তা নির্মাণের পায়তারা চালায়। এ ঘটনায় কুরফান গংয়ের ১৫ জন আদালতে আত্মসমপর্ণ করলে আদালত ১১ জনকে জামিন দিলেও কুরফান আলী, রকিব খাঁন, মহিন মিয়া ও সালাউদ্দিন আহমদকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কুরফান আলীর স্ত্রী আছমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৌরসী (কোরবানপুর মৌজার আর.এস দাগ নং- ৬৫১৪ ও ৬৫১৫) জায়গা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে না দেওয়ায়
গোয়াল ঘর জ্বালানোর মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমার স্বামীসহ আমাদেরকে নানা হুয়রানি করা হচ্ছে। ঘর যদি জ্বালানো হতো তাহলে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন
নিভাতো এবং এলাকার লোকজন জানতো। আমাদেরকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষের আত্মীয় প্রভাবশালী এডভোকেট কামরুল ইসলামের ইন্ধনে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। আমরা ১৩ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও আমাদের বিষয়টি পুলিশ এখনো আমলে নেয়নি। এ ঘটনায় আমরা ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার বরাবরে আছলম মিয়া গং ও পুলিশী হুয়রানির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে আছলম মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাকে না পাওয়ায় মুঠোফোনে তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ভাই এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন,
রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের মামলা আদালতে চলমান আছে। প্রতিপক্ষরা ভাড়াটে লোক এনে নতুন নির্মাণাধীন রাস্তাটি কেটে ফেলে এবং আমার বোন ফাতেমা বেগম (আছলম
মিয়ার স্ত্রী) গোয়ালঘরে পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে তাদের ঘরে হামলা চালায়। বিরোধপূর্ণ এই জমিটি ইজমালি, কারো ব্যক্তিগত নয়। এসময় তিনি আইনজীবি হিসেবে পুলিশ দিয়ে কোন ধরণের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
স্থানীয় ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির মুঠোফোনে বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছি।
গোয়াল ঘর জ্বালানো হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। প্রশাসন তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করবেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে কুরফান ও আছলমের মধ্যকার উত্তেজনার খবর
পেয়ে পুলিশ সরেজমিন গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। উভয়পক্ষের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে কুরফানের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় মামলা রুজু করা হয়নি অপরদিকে আছলমের গোয়াল ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা ও বসতঘরে ভাঙচুরের বিষয়ে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘর জ্বালানোর বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা রুজু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাদী অভিযোগে গোয়াল ঘর জ্বালানোর বিষয়টি এনেছেন। এই বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।