উচ্চ কোলেস্টেরল কমিয়ে সুস্থ থাকার উপায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৬:১৭,অপরাহ্ন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
নিউজ ডেস্ক :: যদি উচ্চ কলেস্টেরল ধরা পড়ে অথবা সাধারণের তুলনায় মাত্রা অল্পটুকুও বেড়ে যায় তবে ওই সময়ই তা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তারমানে এই নয় যে মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে অথবা ওষুধ নিতে হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: কোলেস্টেরল কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি কোলেস্টেরল জমে আছে শরীরে। এরপরই ঠিক ওইটুকু বাড়তি কোলেস্টেরল কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন অবস্থা যেমন- ওবেসিটি, হৃদরোগ, বর্তমান কোলেস্টেরল মাত্রা, ধূমপানের অভ্যাস ইত্যাদির উপর নির্ভর করবে এই প্রক্রিয়া।
পরিশ্রম বাড়াতে হবে: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বরাদ্দ রাখতে হবে ব্যায়ামের জন্য। কোলেস্টেরল কমাতে সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম শরীরচর্চা। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, হজমে সাহায্য করে, ক্যালরি কমায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। ডায়বেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যায়ামের জুরি নেই।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ‘ওবেসিটি’র কারণে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বাড়তি ওজন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় বহুগুণ। তবে ওজন কমানোর জন্য তাড়াহুড়া করা একেবারেই উচিত হবে না। এজন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা জরুরি। তারমানে এই নয় যে না খেয়ে থাকতে হবে। ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
শুঁটিজাতীয় খাবার: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুণ উপযোগী হল শুঁটিজাতীয় খাবার। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার এ ধরনের খাবারগুলো রাখতে হবে তালিকায়। ওই উপাদানগুলোতে থাকা জলীয় উপাদান এবং আঁশ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত হাঁটুন: সময় বের করে ব্যায়াম করা না হলে দিনে একটি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে হাঁটার জন্য। যে কোনো ব্যায়ামের মধ্যে সবচাইতে আদর্শ হল হাঁটা। এজন্য আলাদা কোনো খরচও হয় না পাশাপাশি বেশ উপকারি। নিয়মিত ২০ থকে ৪০ মিনিট হাঁটলে প্রায় ৮.৩ শতাংশ কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।
ডিম খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন: যাদের কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ডিম শত্রুই বটে। তবে ডিম স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তাই খাবারের তালিকায় ডিম রাখলেও খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পরিমাণে বেশি না হয়ে যায়। তাছাড়া যেদিন ডিম খাওয়া হবে সেদিন অন্যান্য ভারি খাবার খাওয়ার পরিমাণে লাগাম টানতে হবে।
চর্বি ছাড়া মাংস খান: কলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অবশ্যই মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। আর খেলেও অবশ্যই চর্বিহীন মাংস বেছে নিতে হবে, তাও পরিমাণ মতো।
প্রচুর সবজি খান: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের জুরি নেই। তাছাড়া খাবারের তালিকায় সবজির পরিমাণ বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এতে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান পাবে।
পর্যাপ্ত ঘুম: শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমের বিকল্প নেই। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
মাছ খান: সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন বার মাছ খাওয়া উচিত। এর মধ্যে স্যামন এবং টুনা মাছ সব থেকে বেশি উপযোগী। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে এই উপাদান। তাছাড়া মাছের তেল থেকে তৈরি ক্যাপসুলেও প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের জন্য অনেকভাবেই ক্ষতিকর। তাছাড়া হৃদপিণ্ডে কোলেস্টেরল জমে গেলে, সেক্ষেত্রে অ্যালকোহল গ্রহণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে অ্যালকোহল দায়ী।
হাতাশা দূর করুন: মানসিক চাপ শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে শরীরে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং পরে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবারহ কমিয়ে ফেলে। তাই মানসিক চাপ দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
পুষ্টিকর নাস্তা: দিনের শুরুতে অনেকেই নাস্তা বাদ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দিনের শুরুতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।
বিকালের কম চর্বিযুক্ত নাস্তা: দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বিকালে হালকা ক্ষুধা অনুভূত হওয়া খুব স্বাভাবিক। এ সময় চর্বি ছাড়া যে কোনো হালকা খাবার খাওয়া উচিত। গাজর, শসা, তাজা ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন: ক্যাফেইন গ্রহণ এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে দিনে এক কাপের বেশি কফি পান করা উচিত নয়। আর সুস্থ থাকতে চাইলে ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমান কমিয়ে আনা উচিত।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন: দিনে একটি সিগারেট গ্রহণের ফলে তা শরীরের উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
রসুন খান: রসুনে রয়েছে প্রচুর অর্গানো সালফার। রক্তের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে এই উপাদান। তবে দিনে দুই থেকে তিন কোয়ার বেশি রসুন খাওয়া উচিত নয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন: সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো জীবনধারা অনুসরণ করা জরুরি। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় কেন? রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে, খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নিয়ম মেনে চলতে হবে- এই সমস্যার কথা আমরা অনেকেই শুনি। কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটাও মোটামুটি সবার জানা। কিন্তু এই কোলেস্টেরল কখন, কীভাবে এবং কেনই বা আমাদের শরীরে জমে? এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। সেই বিষয়গুলোর জানাবো আজ:
কোলেস্টেরল: কোলেস্টেরল মূলত এক ধরনের চর্বি। এই কোলেস্টেরল মোটামুটি চারভাগে ভাগ করা যায়- ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টেরল। এগুলোর এর মধ্যে একটা উপকারী হলেও বাকি তিনটি শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। কোলেস্টেরল নিয়ে এতো শঙ্কার কারণ হলো, এটি জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকখানি। এই কোলেস্টেরল যেকোনো রক্তনালিতে জমা হতে পারে। যেমন মস্তিষ্ক, লিম্বস আক্রান্ত করতে পারে, ব্লকও করতে পারে। যদি হৃৎপিণ্ডে কোলেস্টেরল জমে তাহলে হার্ট অ্যাটাক হবে, যদি লিম্বসে হয় তাহলে হাঁটতে ব্যাপক সমস্যা হবে। আর মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উপকারী কোলেস্টেরলও আছে: তবে ভালো কোলেস্টেরল হলো এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন)। এটি শরীরের পেরিফেরি থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে লিভারে নিয়ে যায়। পরে লিভার দিয়ে এটা বেরিয়ে যায়। তাই এটা বেড়ে গেলে সেটা আমাদের জন্যই উপকারী। এই ভালো কোলেস্টেরল কমে গেলে ওজন বাড়তে থাকে। এটি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডায়বেটিস। আর যে কারণে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের পরিমাণ বাড়ে, ঠিক সেই কারণেই উপকারী ডায়বেটিসের পরিমাণ কমে। এই উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ানোর উপায় হলো নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাছ বেশি খাওয়া।
কেন হয় কোলেস্টেরল: আমাদের শরীরে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে তার মাত্র ৩ ভাগের ১ ভাগ আমরা খাবার থেকে গ্রহণ করি। কোনো রকম কোলেস্টেরলপ্রবণ খাবার গ্রহণ নাও করলেও শরীর নিজেই প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল উৎপাদন করতে সক্ষম। তা দিয়েও শরীর চলবে।
রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও অসম খাদ্যাভাস। অধিক মাত্রায় আনসাচুরেটেড চর্বি জাতীয় খাবার এজন্য দায়ী। এই আনসাচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে লাল মাংস, বাটার কুকিজ, ফার্স্ট ফুড, চিপসসহ বিভিন্ন খাবারে। ধূমপান ও শরীরের বাড়তি মেদ, রক্তের ভালো কোলেস্টেরল কমায়।
কখন হয় কোলেস্টেরল এবং এর ঝুঁকি: সাধারণ নারী ও পুরুষের বয়স ৫০ বছর পার হলে স্বাভাবিক নিয়মে কোলেস্টেরল খানিকটা বাড়তে পারে। এ বয়সে জীবনযাপন পরিবর্তন করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
কোনো দম্পতির যদি অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে তাহলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। এমনকি একজনের কোলেস্টেরল লেভেল বেশী থাকলেও সন্তান ধারণে সময় বেশী লাগতে পারে। জুটিটির। আর গর্ভবতী নারীদের প্রাকৃতিকভাবেই অন্যদের তুলনায় কোলেস্টেরল বেশি থাকে। তবে সন্তান গর্ভে গড়ে উঠতে এবং জন্মদানের জন্যেও প্রচুর কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয়।
অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান কোলেস্টেরল। কিন্তু রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বা লেভেল অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ধমনির প্রাচীর পুরু হয়ে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান
খাবার ও যকৃৎ থেকেই শরীরে কোলেস্টেরলের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ হয়। যকৃতে আগে থেকেই কোলেস্টেরল জমা থাকে। শরীর তার প্রয়োজনে এই কোলেস্টেরল যকৃৎ থেকে নেয়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো দুই ধরনের হয়—নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হলো—ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়ডিজম এবং খাবার। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম না করা, উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড চর্বিজাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে রয়েছে—বংশগত কারণে অনেকের শরীরে লিপিড ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার কারণেও রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর থেকে মানবদেহে কোলেস্টেরল লেভেল বাড়া শুরু করে। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষের দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মহিলাদের তুলনায় কম থাকে। তরুণ বয়সে নারীদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় বেশি থাকে।
রকমফের: এক ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে পরিভ্রমণ করে কোলেস্টেরল। এই প্রোটিন সংযুক্ত কোলেস্টেরলকে বলে ‘লিপোপ্রোটিন’। লিপোপ্রোটিনগুলোয় বিভিন্ন ঘনত্বের প্রোটিন থাকে—উচ্চ ঘনত্ব, নিম্ন ঘনত্ব, নিম্নতর ঘনত্ব।
কোলেস্টেরলের বিভিন্ন ধরন রয়েছে।
এলডিএল: এলডিএল বা লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে বলা হয় খারাপ কোলেস্টেরল। এজাতীয় কোলেস্টেরল সহজেই মানবদেহের ধমনিগাত্রে জমা হতে পারে। এতে প্রোটিন কম ও ফ্যাট বেশি থাকে। কারো রক্তে এই ধরনের কোলেস্টেরল যত কম থাকবে, অ্যাথেরোসকেরেসিস, হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিলতা থেকে তিনি তত বেশি রক্ষা পাবেন।
এইচডিএল: এইচডিএল বা হাইডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে কখনো বলা হয় ভালো কোলেস্টেরল। কারণ এজাতীয় কোলেস্টেরল ধমনিগাত্রে কোলেস্টেরলকে জমাট বাঁধতে দেয় না। এর বেশির ভাগ উপাদানই হলো প্রোটিন, যার সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণ চর্বি মিশ্রিত থাকে। এইচডিএল রক্ত থেকে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে। এটি রক্তের মধ্য থেকে খারাপ কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে জড়ো করে এবং যকৃৎ এই কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করার কাজে সহযোগিতা করে।
ট্রাইগ্লিসারাইড: ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) হলো এমন একটি কোলেস্টেরল, যাতে খুব অল্প পরিমাণ লিপোপ্রোটিন থাকে। সাধারণত রক্তে সামান্যই ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। বরং চর্বিকোষে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি মাত্রায় জমা থাকে। রক্তে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক প্রভৃতির আশঙ্কা বেড়ে যায়।
পরিমাণ নির্ণয়: রক্তের কোলেস্টেরল নির্ণয় করার জন্য দুই ধরনের পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট বা খালি পেটে কোলেস্টেরল টেস্ট এবং নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট। ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্টের আরেক নাম লিপিড প্রোফাইল। এই পরীক্ষায় এইচডিএল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা হয়। আর নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল পরীক্ষায় সামগ্রিক কোলেস্টেরল লেভেল ও এইচডিএল লেভেল বা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ দেখা হয়। সর্বমোট কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৭০ মিলিগ্রামের নিচে, এলডিএল প্রতি ডেসিলিটারে ১০০ মিলিগ্রামের নিচে আর ট্রাইগ্লিসারাইড প্রতি ডেসিলিটারে ১৫০ মিলিগ্রামের নিচে থাকে। ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের মাত্রা ডেসিলিটারে ৪০ মিলিগ্রামের ওপরে রাখা ভালো।
উপসর্গ: কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ নেই। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে এটি সহজে বোঝাও যায় না। কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরলের খারাপ প্রভাবজনিত কারণে অ্যাথেক্সেকেরোসিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ প্রভৃতি কঠিন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
তাই সতর্ক হয়ে ২৫ বছরের পর অন্তত পাঁচ বছরে একবার এবং ৪০ বছরের পর বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা উচিৎ। তা না হলে এমনও হতে পারে, হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর পরীক্ষা করে বোঝা যাবে যে কারো রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে। কেননা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা থাকলে আগে থেকেই সম্ভাব্য বিপদ এড়ানো যায়।
কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়:
ফেনল শুধু খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় না, বরং ভালো কোলেষ্টেরলের মাত্রাও বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা প্রতিদিন গ্রিণ টি পান করেন তাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যারা করেন না তাদের চেয়ে অনেক কম হয়।
প্রাচীনকাল থেকে মেথি বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মেথির বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। মেথির বীজ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং এতে থাকা ফাইবার লিভার ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, খনিজ এবং অ্যামিনো এসিড থাকে। নানা ধরনের অসুখ সারাতে এটি ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমলকি কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমায়। এজন্য প্রতিদিন এক থেকে দুইটি আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।