বড়লেখায় ১৫ বছর যাবৎ বন্ধ থাকা উজালা গ্রন্থাগার চালুর উদ্যোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০৪:২৭,অপরাহ্ন ১৩ অক্টোবর ২০১৯
আব্দুর রব, বড়লেখা ::মৌলভীবাজারের বড়লেখার একমাত্র গণগ্রন্থাগার ‘উজালা গ্রন্থাগার’। একসময় এ লাইব্রেরী নবীন-প্রবীন সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, জ্ঞানীগুণী আর জ্ঞান পিপাসুদের পদচারণায় মূখরিত থাকতো। কিন্তু নানা অব্যস্থাপনায় তা বন্ধ হয়ে যায়। লাইব্রেরীর ভুমিও সংকোচিত হতে থাকে। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ বন্ধ থাকার পর এটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বড়লেখা পৌরসভাকে কর্তৃপক্ষ গ্রন্থাগারটি পরিচালনার জন্য হস্তান্তর করেছে। এসময় আনুষ্ঠানিকভাবে বড়লেখা পৌর পরিষদের কাছে লাইব্রেরির বইসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ১২ ডিসেম্বর উজালা গ্রন্থাগার নামে একমাত্র গণগ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বড়লেখা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রমাপদ চন্দের বাসার একটি অংশকে গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করে এর কার্যক্রম চালু হয়। উপজেলা সদরের মহবন্দ গ্রামের বাসিন্দা ফুটবলার সামছুল আলম চৌধুরী আমান ও মরহুম একরাম আলীর যৌথ উদ্যোগে এটি চালু হয়। এখানে ছিল শত শত মূল্যবান বই। প্রতিদিনই এই গ্রন্থাগারে নানা শ্রেণি-পেশার পাঠকদের জমজমাট আসর বসত। ১৯৬৭ সালে বারইগ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ শতাংশ ভূমি গ্রন্থাগারের নামে দান করেন। এই ভূমিতে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাগার স্থানান্তরিত হয়। সেখানে এর কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকে এই গ্রন্থাগারের সাথে সম্পৃক্ত হন বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি, সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম, সমাজসেবক ফৈয়াজ আলী, মরহুম চেয়ারম্যান মন্তজির আলী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিসবাউজ্জামান মাখন, সাবেক ইউপি সদস্য ভূমিদাতা আব্দুল জলিল, বড়লেখা প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোপাল দত্ত, সমাজসেবক ও গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু, সমাজসেবক আব্দুস শহীদ প্রমুখ। এদিকে অবকাঠামো, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ৯০ দশকের পর থেকে কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। বইপত্র সংগ্রহ ও আসবাবপত্র সংস্কার করে এটি পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০৫ সালে গ্রন্থাগারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গ্রন্থাগারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পরিত্যক্ত ঘরে একজন চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। পৌরসভার আগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ বছর ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে লক্ষ্যে গ্রন্থাগার কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় পৌরসভাকে এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার। এরপর গত ৩ অক্টোবর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বড়লেখা পৌর পরিষদের কাছে ভূমি, লাইব্রেরির বইসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং কাগজাদি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
হস্তান্তরের সময় উজালা গ্রন্থাগারের পক্ষে কমিটির বর্তমান সভাপতি সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মিসবাউজ্জামান মাখন, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু, সদস্য ফৈয়াজ আলী, সদস্য ও বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোপাল দত্ত এবং পৌরসভার পক্ষে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, কাউন্সিলার আলী আহমদ চৌধুরী জাহেদ, আব্দুল মতিন, আব্দুল মালিক জুনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গ্রন্থাগার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু জানান, ‘অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে। পরবর্তীতে আমাদের আর্থিক সংকটের কারণে আর চালু করা সম্ভব হয়নি। গত বছর পৌরসভার মেয়রের আগ্রহের প্রেক্ষিতে আমরা সভা করে সিদ্ধান্ত নেই পৌরসভাকে হস্তান্তর করার। এরপর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি।’
বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, ‘উজালা গ্রন্থাগার স্বাধীনতাত্তোর বড়লেখার একটি ঐহিত্যবাহী গ্রন্থাগার। গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এটার মাধ্যমে আশির দশক পর্যন্ত লাইব্রেরি সচল ছিল। এটা সে সময়ের শিক্ষার্থীরা পরিপূর্ণ ব্যবহার করেছে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। সবাই উজালা গ্রন্থাগার কেন্দ্রীক ছিল। আশির দশক পরে আস্তে আস্তে এর জৌলুশ হারিয়ে যায়। ২০০৫ সালে নানা কারণে এটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। আমরা আগ্রহ দেখাই। পরে গ্রস্থাগার কমিটি পৌরসভাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি আমাদের সব কাগজাদিসহ হস্তান্তর করেছেন। ভূমি বুঝে পেয়েছি। জায়গাটিতে একজন চা বিক্রি করেন তিনি একমাস সময় নিয়েছেন। পরিবেশ মন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করব।