‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৭:৫৯,অপরাহ্ন ০২ অক্টোবর ২০১৯
বড়লেখার ডাক ডেস্ক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার রোকেয়া খাতুন লাইসিয়াম স্কুলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের গল্প বলতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন , ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা মুজিব ভাই বলেই ডাকতাম। ৭০ এর নির্বাচনের আগে একবার বড়লেখা এসেছিলেন। প্রার্থীদের জনগনের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে। দেখা হয়েছিল। ৭ মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন তখন বড়লেখার লোকজন আগ্রহভরে রেডিও নিয়ে বসেছিলেন। ভাষণ শোনবেন। কিন্তু তখনকার পাক সরকার রেডিওতে ভাষণ প্রচার করতে দেয়নি। ভাষণের বদলে তখন গান-বাজনা প্রচার করা হচ্ছিল। আমরা ৮ মার্চ ভাষণ শুনি। এরপর সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি। আমাকে বড়লেখায় সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। লাঠি হাতে আমরা প্রথমে প্রশিক্ষণ শুরু করি। তখন মেজর সিআর দত্ত, কমানডেন্ট মানিক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করি। রব ভাই বড়লেখায় আসেন। এরপর ভারতীয় সৈন্যরা আমদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে। ভারতে লোকজন পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াই। আমরা ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করি। পাকিস্তানি সৈন্যরা সিলেট বিমানবন্দরে অবস্থান করছিল। সেখানে হামলার জন্য প্রস্তুতি নেই সবার সাথে। উদ্দেশ্য ছিল সিলেট ফ্রি করতে পারলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল এমসি কলেজ এলাকা দিয়ে গিয়ে পথ ভুলে দুজন সৈন্য ধরা পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকায় খবর পাঠায়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে বৃষ্টির মত বিমান পৌঁছে যায় সিলেটে। বিমান হামলা শুরু করে তারা। কোনো মতে আমরা সবাই বেঁচে যাই। এরকম নানা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। দিনগুলো অনেক কষ্টের ছিল। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়। ডা. আব্দুস শুক্কুর তখন জাতীয় সংগীত শুরু করেন। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন ও ধারণ করে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের আত্মত্যাগের কাহিনি জানা দরকার। দেশকে ভালোবাসতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে গর্ববোধ করি। যতদিন বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে যেন কাজ করতে পারি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
পরে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম, সাবেক বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল আহমদ। প্রশ্ন-উত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সূত্র: সিলেট ভিউ।